17.5 C
New York
Tuesday, June 17, 2025

Buy now

spot_img

মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে, নিজের চুল কেটে ক্যান্সার আক্রান্তদের পাশে এক ছাত্রী।

উত্তর দিনাজপুর : কালিয়াগঞ্জ : ১০ই ফেব্রুয়ারী, সোমবার : মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে থেকেই নিজের চুল কেটে ক্যান্সার আক্রান্তদের পাশে দাঁড়ালেন রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। কালিয়াগঞ্জ হাসপাতাল পাড়ার বাসিন্দা জয়শ্রী দেবনাথ রবিবার নিজের চুল কাটিয়ে মুম্বইয়ের একটি নার্সিংহোমে ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য তা পাঠানোর উদ্যোগ নিয়েছেন। ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য যে চিকিৎসা চলে তার ফলে অনেক রোগীরই চুল উঠে যায়। ওই কঠিন ব্যাধিতে যাঁরা আক্রান্ত হন, তাঁদের মানসিক যন্ত্রণাকে খানিকটা সহনীয় করে তুলতে অনেক সময় কাজে লাগে কৃত্রিম চুল। নামের মধ্যে কৃত্রিম শব্দটি থাকলেও সেই কৃত্রিম চুল বানাতে প্রয়োজন হয় আসল চুলেরই। বিভিন্ন সেলুন বা চুল কাটানোর দোকান থেকে অনেক সময় সেই চুল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে, অথবা সেই চুল মিলতে পারে যদি জয়শ্রীর মতো কেউ নিজের চুল দান করেন। ক্যান্সারে আক্রান্তদের মাথায় কৃত্রিম চুল লাগাতে কাজ করে মুম্বইয়ের একটি নার্সিংহোম। সেখানেই কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে জয়শ্রীর ওই চুল পৌঁছে যাবে। রায়গঞ্জের একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্ণধার মোনালিকা দাস বলেন, জয়শ্রী আমাদের সংগঠনের সদস্য হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় পডুয়া ছাত্রী ক-দিন আগে আমাদের কাছে এসে ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য নিজের চুল দান করার ইচ্ছা প্রকাশ করে। আমরা ওর ইচ্ছেকে কার্যকরী করতে খোঁজখবর শুরু করি। তখনই জানা যায় মুম্বইয়ের ওই নার্সিংহোমের কথা, যারা ক্যান্সার আক্রান্তদের মাথায় কৃত্রিম চুল লাগানোর কাজ করে। সেই নার্সিংহোমের ঠিকানায় জয়শ্রীর ১২ ইঞ্চি লম্বা চুল পাঠানো হচ্ছে।

বছর একুশের জয়শ্রী দেবনাথ নিজের প্রায় ১২ ইঞ্চি লম্বা চুল কেটে ফেলতে কিন্তু এতটুকু দ্বিধাবোধ করেননি। তিনি বলেন, আমার তো সবই আছে। ক্যান্সার আক্রান্ত ওই মানুষগুলো, তাঁদের সাংঘাতিক শারীরিক যন্ত্রণা তো আছেই, সেই সঙ্গে মাথার চুল উঠে গিয়ে তাঁরা অনেক সময় যেন নিজেকেই চিনতে পারেন না। সেটাও একটা মানসিক যন্ত্রণার বিষয়। আমার সামান্য চুল সেই মানুষগুলোর কাজে লাগবে, সেটা আমার কাছে আনন্দের মনে হয়েছে। রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃত অনার্সের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী জয়শ্রী দেবনাথ আরও বলেন, ছোটবেলা থেকে সমাজের জন্য, মানুষের জন্য কিছু করার ইচ্ছে একটা ছিল। কিন্তু সেভাবে এখনও কারও জন্য কিছু করতে পারিনি। ক্যান্সার আক্রান্তদের চুল ডোনেট করা যায়, এটা জানার পর এক মুহূর্ত ভাবিনি। মাকে ইচ্ছের কথা জানাতেই মা আমাকে উৎসাহ জুগিয়েছে। জয়শ্রীর মা জয়ন্তী দেবনাথের কাপড়ের ব্যবসা রয়েছে। বাবা গৌতম দেবনাথ কালিয়াগঞ্জ আইটিআই কলেজের শিক্ষক। একমাত্র মেয়ের ইচ্ছেকে মান্যতা দিয়ে মা জয়ন্তী দেবনাথ বলেন, ও ছোটবেলা থেকে সমাজের জন্য কিছু করতে চায়। রোজগার না করেও যে কিছু করা যেতে পারে, সেকথা জানতে পেরে মেয়ে ক্যান্সার আক্রান্তদের জন্য চুল ডোনেট করতে ইচ্ছে প্রকাশ করে। মেয়ের সৌন্দর্য নিয়ে আমি চিন্তা করছি না। ওর সদভাবনাটাই মা হিসেবে আমাকে গর্বিত করেছে। ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কোঅর্ডিনেটর মোনালিকা দাস বলেন, জয়শ্রীর একার চুল দিয়ে সব ক্যান্সার আক্রান্তের সমস্যার সমাধান হবে না। তবে ওর মতো অনেকেই এভাবে ওই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ালে ক্যান্সার আক্রান্তরা অনেকেই সুন্দরভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখতে পারবেন। আমাদের সংগঠনের সদস্যদের প্রত্যেক বছর অন্তত ১০০০টি গাছ লাগানোর টার্গেট রয়েছে। দুঃস্থ পডুয়াদের বইখাতা দিয়েও আমরা সহযোগিতা করি। মানুষের ও সমাজের প্রতি সকলের একটা দায়বদ্ধতা রয়েছে, সেই ভাবনা থেকে এধরনের কাজ আমরা করে থাকি।

সম্পর্কিত খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

22,878FansLike
3,912FollowersFollow
14,700SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সাম্প্রতিক খবর

error: Content is protected !!