জলপাইগুড়ি : মালবাজার : ১৩ই এপ্রিল ২০২০, সোমবার : সরকারের কাছ থেকে নির্দেশ পেয়ে লকডাউনের মাঝে আংশিক শ্রমিক নিয়ে সোমবার থেকে কাজ চালু করলো ডুয়ার্সেরর চাবাগানগুলি। অন্যদিকে সরকারের এই নির্দেশনায় অখুশি একাধিক শ্রমিক সংগঠনগুলি। দেশ জুড়ে লকডাউন চলছে। সারা দেশ করোনার বিরুদ্ধে লড়াইতে সামিল। প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এই রকম সময়ে চাবাগানে আংশিক শ্রমিক দিয়ে কাজ শুরু হয়ে গেল। গত ২৫ মার্চ থেকে ডুয়ার্সের চাবাগানগুলিতে লকডাউন শুরু হয়। এক পক্ষ কাল অতিক্রম করার পর চাবাগানগুলিতে নানান সমস্যা দেখা দেয়। লকডাউনে কাজ বন্ধ থাকায় শ্রমিকদের মজুরি থমকে গিয়েছিল। প্রচন্ড আর্থিক সমস্যায় পড়েছিল শ্রমিকরা। র্যাশনে চাল আটা পেলেও অন্যান্য সামগ্রী কিনতে সমস্যা হচ্ছিল। পাশাপাশি চাগাছের পাতা না তোলায় পাতা বড় হয়ে গিয়েছিল। এরকম চলতে থাকলে আবার পাতার অগ্রভাগ ছাটাই করে কীট নাশক প্রয়োগ করে নতুন পাতার অপেক্ষা করতে হবে। সামগ্রিক সমস্যার কথা রাজ্য সরকার ২৫ শতাংশ শ্রমিক দিয়ে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাগান চালু করার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ মেনে সোমবার বাংলা বছরের শেষ দিন থেকে কাজ শুরু হয়। এদিন মালবাজার শহর সংলগ্ন সোনগাছি চাবাগানে গিয়ে দেখা গেল শ্রমিকরা যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রেখে মুখে মাক্স লাগিয়ে পাতা তুলছে । চাবাগানে ম্যানেজার রাধেশ্যাম খান্ডেলওয়াল জানান, এমনিতেই বছরের অন্যান্য সময় সোমবার দিন শ্রমিকদের উপস্তিতির হার কম থাকে। আজও তেমন হয়েছে। ১৮ শতাংশ শ্রমিক উপস্থিত ছিল। তাদের দিয়ে পাতা তোলার কাজ ও বর্ধিত অংশ ছাটাই করার কাজ করানো হয়েছে। মাল মহকুমা জুড়ে এদিন চাবাগান গুলিতে আংশিক শ্রমিক দিয়ে কাজ শুরু করার দৃশ্য নজরে এসেছে।
করোনা আতংকের মাঝে কাজ শুরু খানিকটা অখুশি বিজেপি প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের নেতা তথা সাংসদ জন বারলা জানান, শ্রমিক জীবন আগে পরে কাজ। চাবাগানে অনেক সময় সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখা যায় না। যেটা জরুরি। সরকার শ্রমিকদের জন্য ভাবা উচিত ছিল। সিপিএমের শ্রমিক সংগঠনের তথা দলের রাজ্য কমিটির সদস্য জিয়াউল আলম জানান, রাজ্য সরকার সঠিক নীতি ঘোষণা করতে পারছে না। খাতায় কলমে ২৫ শতাংশ থাকলেও অনেক চাবাগানে বেশি শ্রমিক দিয়ে কাজ শুরু করেছে। পাতা তোলার সময় সামাজিক দুরত্ব থাকলেও অন্যান্য অনেক ক্ষেত্রে এই দুরত্ব মানা সম্ভব হচ্ছে না। এতে শ্রমিকদের নিরপত্তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে। এক্ষেত্রে শ্রমিকদের নিজেদের সচেতন হতে হবে নতুবা সরকারকে এই বিষয়ে পর্যবেক্ষণ চালাতে হবে যাতে স্বাস্থ্যবিধি বজায় থাকে। কিন্তু, বন্ধ চাবাগানের সমস্যা আরও জটিল। সবার নিরপত্তার কথা ভাবা উচিত। সরকারের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে তৃনমুল কংগ্রেস প্রভাবিত তরাই ডুয়ার্স প্লান্টেশন ওয়ার্কার্স ইউনিয়নের অন্যতম সম্পাদক পুলিন গোলদার। তিনি বলেন, চাবাগানের সাথে অন্যান্য শিল্পকে মিলিয়ে দেওয়া ঠিক নয়। চাবাগানে কাঁচামাল সবুজ পাতা। পাতা সময় মতো না তুললে পাতা বড় হয়ে যায়। লকডাউন উঠে যাওয়ার পর গাছ আবার ছাটাই করে নতুন পাতার জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এতে গোটা মরসুম মার খাবে। সেইজন্য রাজ্য সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে সামাজিক দুরত্ব বজায় থাকবে ও শ্রমিকরা নুন্যতম এক সপ্তাহের মজুরি পাবে। এতে শ্রমিক ও চাবাগান রক্ষা পাবে।