কোচবিহার : ১৪ই মে ২০২০, বৃহস্পতিবার : লক ডাউনের ফলে বিপাকে কোচবিহারের পাটি শিল্পীরা। বেত থেকে তৈরী পাটি রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় গত বছরেও দেশ পেরিয়ে বিদেশে পারি দিয়ে ছিল। করোনার থাবায় বর্তমানে অসহায় পাটি শিল্পীরা। সরকারী সাহায্যের আশায় দিন গুনছেন তারা। দীর্ঘদিন দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। পাটি বিক্রির সমস্ত হাট বন্ধ থাকায় পাটির বিক্রি করতে পারছেন না পাটি শিল্পীরা। ফলে বিপাকে পড়েছেন কোচবিহার ১ নম্বর ব্লকের ঘুঘুমারী গ্রামের ধলুয়াবাড়ি এলাকার পাটিশিল্পীরা। শহর থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে এই ধলুয়াবাড়ি।
এই গ্রামে প্রায় বাড়িতেই পাটিশিল্পীদের বাস। সরকারি সাহায্যের আশায় শিল্পীরা চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের শিল্পকর্ম। তারা সারা বছর পাটি বানিয়ে বছরের জানুয়ারী মাস থেকে এপ্রিল মাস অবধি সময়ে সেই পাটি বিক্রি করেন। আর সেই পাটি বিক্রির টাকায় চলে তাদের সংসার ও রুটি রুজী। এই পাটি বিক্রির মাসগুলিতেই করোনার থাবায় লকডাউন ফলে অসহায় অবস্থা পাটি শিল্পীদের। বেত গাছের ছাল ছাড়িয়ে সেই ছাল দিয়ে পাটি শিল্পীরা তৈরী করেন পাটি। বিয়ে থেকে শুরু করে বিভিন্ন সামাজিক কাজে ব্যবহৃত হয় এই পাটি। বর্তমানে চাহিদা কম হবার কারণে বেত বনে বেত পরে রয়েছে। কাটার সময় হয়ে এলেও সেই বেত কেটে ঘরে তুলছেন না শিল্পীরা। বছর খানেক আগেও এখানকার তৈরী পাটি রাজ্য সরকারের সহযোগিতায় দেশ পেরিয়ে বিদেশে পারি দিয়েছিল। তবে এবার ছবিটা একেবারেই আলাদা। লোকডাউনের কারণে বন্ধ পাটির হাট, নেই পাটির বিক্রি। দিশেহারা গোটা পাটিশিল্পের সাথে জরিত মানুষরা। তাদের জন্য সরকার সাহাযের হাত বাড়িয়ে দেবেন সেই আশায় দিন গুনছেন পাটি শিল্পীরা। এবিষয়ে গোবিন্দ চন্দ্র সরকার বলেন, সরকারের তরফ থেকে পার্টি হাট বন্ধ করে দিয়েছে।
সোমবার ও বৃহস্পতিবার পাটি হাটে পার্টি কেনা বেচা বন্ধ করেছে। তারজন্য আমাদের পার্টি শিল্পীদের খুবই ভয়াবহ অবস্থা। শিল্পীদের আর্থিক সাহায্য জন্য মুদ্রা লোন, যেটা কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করেছে এই লোন পেলে শিল্পীরা আবার পুনর্জীবিত হবে। ব্যবসাটা আবার আগের জায়গায় ফিরে আসবে। এবিষয়ে মালতী মন্ডল বলেন, আমরা পার্টি তো বিক্রি করতে পারছি না। সমস্যার মধ্যে আছি। কি খাবো, কি করব চিন্তায় আছি। আগে তো পার্টি বেচা-কেনা হতো, খরচ করে নিয়ে আসতো ঘরে খাবার থাকত। এখন তো পার্টি বিক্রি করা যাচ্ছে না। এখন খরচ আনতে পারে না। এবিষয়ে পাটি শিল্পী অজিত দত্ত বলেন, লকডাউন এর জন্য হাট বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে পার্টি বিক্রি না করার জন্য আমাদের উপার্জন হচ্ছে না।
তাই হাট বাজার করতে পারছি না। কলকাতা দিল্লিতে পাটি যেত সেখানে এখন যাচ্ছে না। কারণ যানবাহন বন্ধ যাওয়া আসা সম্ভব নয়। তাই শিল্পীরা এখন ভেঙে পড়েছে। আমরা এখন কি খাব হতাশায় পড়ে গেছি। এখন আমাদের যদি সরকার কোন রকম অনুদান দেয় তাহলে ভালো হবে। এবিষয়ে পাটি শিল্পী হরিপদ দে বলেন, এই লকডাউন হওয়াতে আমাদের খুব অসুবিধা চলছে। হাট-বাজার বন্ধ হয়েছে গাড়ি চলেনা। আসাম দিল্লীতে পাটি যেত আমাদের ব্যাপারীরা পাটি নিয়ে বিক্রি করত। হাটে পাটি বিক্রি করে বাচ্চা নিয়ে আমরা চাল-ডাল নিয়ে এসে খেতাম। এখন আমাদের পার্টি বিক্রি হয়না, খুব অসুবিধা, ঘরে বসে কিছু কিছু কাজ করছি এখন আমরা অভাব-অনটনের সাথেই রয়েছি সরকার যদি আমাদের কিছু সাহায্য করত তাহলে আমরা উপকৃত হতাম।