উত্তর দিনাজপুর : কালিয়াগঞ্জ : ২৪শে নভেম্বর ২০২০ : মঙ্গলবার : উত্তর দিনাজপুর জেলার কালিয়াগঞ্জ ব্লকের অধীন ২ নং ধনকৈল গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার নসিরহাট গ্রামের দাস পাড়ার ২৩ বছরের গৃহবধু মুন্নি অর্থাৎ জয়ন্তী দাসের মৃত্যু কে ঘিরে বিজেপির ডাকে মঙ্গলবার কালিয়াগঞ্জ ১২ ঘন্টার বন্ধে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার ছবি ধরা পরলো। জয়ন্তী দাসের মৃত্যুর পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট আত্মহত্যা বলে প্রকাশিত হলেও বিজেপি এই মৃত্যু কে ধর্ষন করে ঝুলিয়ে খুন করা হয়েছে বলে বিগত ৩ সপ্তাহ ধরে লাগাতার আন্দোলন করে আসছে।
এমনকি কালিয়াগঞ্জ শহরে সুকান্ত মোড়ে ধর্ণা মঞ্চ গড়ে তুলে উত্তর দিনাজপুর জেলা বিজেপি নেতৃত্ব লাগাতার কয়েকদিন ধর্ণায় বসে, তার কারণ মুন্নির হত্যার তৃণমূল কংগ্রেস ধর্ষনকারী খুনিদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে। শেষ পর্যন্ত আগাম বার্তা দিয়ে ১২ ঘন্টার কালিয়াগঞ্জ বন্ধের ডাক দেয় উঃ দিনাজপুর জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। মুন্নির মৃত্যুর ঘটনায় উক্ত ধর্না মঞ্চে এবং নসিরহাটে মুন্নির বাড়িতে উপস্থিত হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় নারী ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী তথা রায়গঞ্জের সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী। খুনিদের গ্রেফতার করা না হলে ১২ ঘন্টার বন্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। জয়ন্তী দাস ওরফে মুন্নির শ্বাশুড়ি হেমা দাস ও স্বামী উজ্জ্বল দাস রোজগার করার জন্য মুন্নি কে অসামাজিক কাজে লিপ্ত হতে বলে অভিযোগ। তবে বিবাহিত নারী ও এক সন্তানের জননী হয়ে হয়তো মুন্নি তার স্বামী ও শ্বাশুড়ির কুপ্রস্তাব কে মেনে নিতে পারে নি বলেই কি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছিল কিনা এই প্রশ্ন এলাকাবাসী দের মধ্যেও ঘুরপাক খাচ্ছে। তবে ধর্ষণ করে খুন করার মতো কোনো বিষয় পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে ধরা পরে নি।
মুন্নির মৃত্যু কে ঘিরে বিজেপির লাগাতার আন্দোলনে কালিয়াগঞ্জে ১২ ঘন্টার বন্ধে এক মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিল। প্রতিদিনের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা কিছুটা হলেও থমকে গিয়েছে। তবে গাড়ি চলাচল সচল ছিল, বিভিন্ন অফিস কাছাড়ি খোলাই ছিল এবং সকালের দিকে কিছুক্ষনের জন্য দোকান বন্ধ থাকলেও বিশেষ বিশেষ জায়গায় দোকানপাট খোলাই ছিল। এমনিতেই যে কোনো রাজনৈতিক বন্ধে ব্যবসায়ীরা কোনোরকম ঝামেলায় জড়াতে চান না। তাই দোকানপাট বন্ধ রাখা মানেই যে বন্ধ কে পূর্ণ সমর্থন তাও নয়। অপরাধীর আইনানুযায়ী সাজা হোক সকলেই চাইছেন। বিশেষ করে এক বছরের সন্তান রেখে মুন্নির চলে যাওয়াটা কেউ মেনে নিতে পারছেন না এলাকাবাসীরা। কালিয়াগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন আইন মেনেই তাদের কাজ চালিয়ে গেলেও হাসপাতালে গ্রেফতার হওয়া চিকিৎসাধীন মুন্নির শ্বাশুড়ি কি ভাবে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গেল।
সকাল থেকেই কালিয়াগঞ্জের মেইন বাজার চত্ত্বর তারা বাজারে প্রতিদিনের মতো পাইকারি বাজারে সবজি বিক্রেতাদের উপর, টোটো চালকদের উপর এবং রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালকদের উপর বিজেপি ঝান্ডা নিয়ে বন্ধ সমর্থকরা বন্ধ পালনে জোরজবরদস্তি করতে শুরু করলে প্রথমে কালিয়াগঞ্জ থানার পুলিশ প্রশাসন বিজেপি বন্ধ সমর্থকদের বোঝানোর চেষ্টা করেন এবং পরে পুলিশ প্রশাসন বন্ধ সমর্থকদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসতে বাধ্য হয়। বিজেপি নেতা কর্মীদের গ্রেফতার করার প্রতিবাদে পরবর্তী সময়ে কালিয়াগঞ্জ থানার সামনে এসে বিজেপি নেতৃত্বরা এসে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে। সারাদিনে ১২ ঘন্টার কালিয়াগঞ্জ বন্ধের চেহারা মিশ্র প্রতিক্রিয়ার ছবিতে দেখা গেল।