জলপাইগুড়ি : ময়নাগুড়ি : ২২শে ডিসেম্বর ২০২০ : মঙ্গলবার : স্বামী মারা গিয়েছে প্রায় দু বছর আগে। এরপর থেকে এক কন্যা সন্তান নিয়ে শ্বশুর বাড়ি থেকে হেনস্থার শিকার শুক্লা বিশ্বাস। মঙ্গলবার স্বামীর সম্পত্তির অধিকার আদায়ের দাবীতে দোকান ঘর দখল নিলো বিধবা স্ত্রী। এই ঘটনাটনায় ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে আমগুড়ি বাজার এলাকায়। মৃত ভীম বিশ্বাসের স্ত্রী শুক্লা বিশ্বাস সূত্রে খবর, স্বামী ২০১৮ সালে মারা গেলে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এমন কি শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সম্পন্ন হওয়ার আগেই তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া হয়। এই অবস্থায় সে তার সন্তান নিয়ে বাপের বাড়ি মালবাজারে গিয়ে ওঠে। এরপর দীর্ঘদিন ধরে আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে এই বিষয়টি জানানো হয় শুক্লা বিশ্বাস পক্ষ থেকে। বার বার বৈঠক করা হলেও এর কোনো সুরাহা না মেলায় আমগুড়ি বাজারে থাকা ভীম বিশ্বাসের পরিবারের দোকান দখল করেন শুক্লা বিশ্বাস। এরপর সোমবার সেই দোকানে ফের তালা লাগিয়ে দিয়ে যায় মৃত ভীম বিশ্বাসের পরিবারের সদস্যরা। এরপর সোমবার রাতে ঘটনাস্থলে আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসার কথা বললেও মঙ্গলবার সকালে আমগুড়ি বাজার কমিটির মদতে তালা ভেঙে পুনরায় দোকান ঘর দখল নেন শুক্লাদেবী।
শুক্লা বিশ্বাস বলেন, আমার মেয়ের জন্ম সার্টিফিকেট, আমার আধারকার্ড সব কিছু ওরা আটক করে রেখেছে। আমাকে আমার স্বামীর সম্পত্তির অধিকার দেবে না বলছে। আমি এই অবস্থায় আমার সন্তান নিয়ে কি করবো, কোথায় যাবো। অন্যদিকে মৃত ভীম বিশ্বাসের পরিবার সূত্রে খবর, পারিবারিক অশান্তির কারনে ভীম ও তার স্ত্রীকে দুর্লভ বিশ্বাসের গ্যারেজ এর দোকানের পিছনে ঘরে থাকতে বলা হয়। দোকান ঘরের পিছনে সাত দিন থাকার পর ভীম বিশ্বাসের মৃত্যু হয়। এরপর তার স্ত্রী নিজের বাড়ি গেলে আর ফিরে আসেনি। এখন তার স্ত্রী ও সন্তান এর অধিকার দাবী করছে। পরিবারের পক্ষ থেকে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান সহ বৈঠক করে সিদ্ধান্ত করা হয়েছে। সে সম্পত্তির ভাগ পাবে। কিন্তু তার স্বামীর যেই দোকানটি নয় সেই দোকান অবৈধভাবে দখল নিয়েছে। এর বিরুদ্ধে থানায় মামলা জানাবেন। মৃত ভীম বিশ্বাসের দাদা তারাপদ বিশ্বাস বলেন, আমার বিরুদ্ধে যা অভিযোগ হয়েছে সমস্তটাই মিথ্যা। আমরা কখনই বলিনি সম্পত্তি ভাগ দেবো না। এমনকি এই বিষয়ে আলোচনাও হয়েছে। কিন্তু যে দোকান দখল করা হয়েছে সেটা দুর্লভ বিশ্বাস এবং তারাপদ বিশ্বাসের নামে আছে। তাহলে এই দোকান কি ভাবে দখল নেয়। এই বিষয়ে গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান এবং ব্যবসায়ী সমিতি যা সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই মেনে নেব। ভীম বিশ্বাসের মা কৃষ্ণা রানী বিশ্বাস বলেন, এর আগে আমাদের বাড়ির বিরুদ্ধে এই বউ কেস করেছে। এরপর থেকেই বাড়িতে অশান্তি। ওকে আমরা বাড়িতে ঢুকতে দেই নি, ওকে সম্পত্তি দেবো না এগুলো সব মিথ্যা। আমার নাতনী আছে ওকে তো সম্পত্তি দেওয়া হবে।
আমগুড়ি বাজার কমিটির কোষাধ্যক্ষ রোমিও বসুনিয়া বলেন, এই মহিলা আমাদের কাছে অনেক বার এসেছে। কোলে একটা বাচ্চা নিয়ে অন্যের বাড়িতে থাকে। ওই মহিলাটি নিজের স্বামীর সম্পত্তির ভাগ চেয়েছে। এমনকি স্বামী মারা যাওয়ার সময় এই দোকানের পিছনের ঘরে তারা থাকতো। তাই আমরা বাজার সমিতি মহিলাটিকে দোকান ঘরে ঢুকিয়ে দিয়েছি। যাতে দোকান করে বাচ্চাটিকে মানুষ করতে পারেন। এই বিষয়ে আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান দিলীপ রায় বলেন, এই বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েছে এবং আমরা অনেক বার আলোচনায় বসি। এরপর সেখানে মহিলাটিকে তার সম্পত্তির ভাগ দেওয়ার কথা বলা হয়। এমনকি ছেলের পরিবারের বিরুদ্ধে এর আগে যে মামলা করা হয়েছে তা তুলে নেওয়া হলে সম্পত্তি ভাগ দেবেন বলেও আলোচনা হয়। কিন্তু সোমবার দোকান ঘর নিয়ে একটা ঝামেলা হয়। আমি তাদের বৃহস্পতিবার আলোচনায় বসার কথা বলি। কিন্তু তারা তা না শুনে মঙ্গলবার সকালে একটা ঝামেলা সৃষ্টি করেছে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে সমাধান করা হবে।