মালদা : ২৪শে ফেব্রুয়ারী ২০২১ : বুধবার : করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউন এর জেরে হারিয়েছে কাজ। ভিন রাজ্য থেকে গ্রামে ফিরে এসে এলাকাতেই কোন মতে কাজ জুটিয়ে বৃদ্ধ বাবা-মা ও স্ত্রী এবং শিশুপুত্রের মুখে এই দুঃসময়ে খাবার তুলে দিচ্ছিলেন মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার পিপলা গ্রামের বাসিন্দা বিষ্ণুদাস। কিন্তু বিধি বাম। এই দুঃসময়ে আচমকা নাবালক ছেলের ডান কানে ধরা পড়ে ক্যান্সার। কিন্তু এই অর্থাভাবের মধ্যে কি ভাবে চিকিৎসা করাবেন ভেবেই আকুল পরিযায়ী শ্রমিক বিষ্ণু দাস। অর্থ সাহায্যের জন্য গ্রামবাসীদের দরজায় দরজায় ঘুরছেন। কিছু সাহায্য মিলেছে, কিন্তু সে আর কতটুকু। কয়জন স্বহৃদয় ব্যক্তিও কিছু সাহায্যের হাত বাড়িয়েছেন, কিন্তু তাও বর্তমানে ডাক্তার দেখাতেই খরচ হয়ে গিয়েছে। এখন প্রয়োজন অপারেশনের জন্য টাকা। কিন্তু কিভাবে টাকা যোগাড় হবে এই প্রশ্নের কোন সদুত্তর মিলছে না। এক্ষেত্রে জন-প্রতিনিধি, নেতা বা অন্য কেউ এখনও পরিবারটির সাহায্যে এগিয়ে আসেননি কেন তা নিয়ে উঠেছে প্রশ্ন। বিষ্ণু ভিন রাজ্যে রাজমিস্ত্রির সঙ্গে যোগানদারের কাজ করেন। প্রায় একমাস ধরে ছেলের চিকিৎসা করানোর আশায় বাড়িতে বসে রয়েছে। ছেলে শুভ দাস, বয়স মাত্র ৩ বছর, প্রায় তিন মাস ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত। প্রাথমিক ভাবে মালদা, হরিশ্চন্দ্রপুর, চাঁচল, কাটিয়ার ও রায়গঞ্জে নিয়ে গিয়ে তার চিকিৎসা করানো হলেও ডাক্তারবাবুরা তাকে রেডিয়েশন থেরাপির পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি দ্রুত অপারেশন করার পরামর্শ দেন। অপারেশন করতে প্রায় দুই লক্ষাধিক টাকা খরচ হবে বলে জানা গেছে। অন্যান্য খরচও রয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় তিন লক্ষাধিক টাকা লাগবে। এত টাকা অন্যান্য আত্মীয়দের পক্ষেও সাহায্য করা সম্ভব নয়।
বর্তমান পরিস্থিতিতে তার চিকিৎসার খরচ কীভাবে জোগাড় হবে, তা বুঝে উঠতে পারছে না। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড না থাকায় কোনো বেসরকারি নার্সিং হোমেও চিকিৎসা করাতে পারছে না। এদিন বিষ্ণু দাস এর বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল মায়ের কোলে যন্ত্রণায় ছটফট করছে তিন বছরের ছোট্ট শুভ দাস। পরিবারের প্রত্যেকটি লোক অসহায়। যেখানে রাজ্য সরকার দুয়ারে সরকার প্রকল্প চালু করেছে যাতে প্রত্যেকে সরকারী প্রকল্পের সুবিধা পায়। সেখানে ক্যান্সার আক্রান্ত এই শিশু আবেদন করার পরেও পাইনি স্বাস্থ্যসাথী কার্ড। এদিকে এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়ে গেছে রাজনৈতিক তরজা। তৃণমূলকে কটাক্ষ করেছে বিজেপি। পাল্টা জবাবও দিচ্ছে তৃণমূল। ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুর বাবা বিষ্ণু দাস পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক। তিনি বলেন, তিন-চার মাস আগে জানতে পারি ছেলের ক্যান্সার। রায়গঞ্জে গিয়ে চিকিৎসা করাচ্ছি। এখন ডেট অনুযায়ী কেমো দিতে হচ্ছে। লোকে যা আর্থিক সাহায্য করেছিল তা দিয়ে এতদিন চিকিৎসা হয়েছে। এখন আর আমার সামর্থ্য নেই। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড এর আবেদন করেও এখনো পাইনি। মুখ্যমন্ত্রীর কাছে করজোড়ে আবেদন করছি। নয় তো আমার ছেলেটা বাঁচবে না।
শিশুটির দাদু অঞ্চল দাস বলেন, ছেলের কাছ থেকে যখন জানতে পারি আমার নাতির ক্যান্সার হয়েছে, শুনে মাথা খারাপ হয়ে যায়। লোকের সাহায্যে এতদিন চিকিৎসা হয়েছে। আমি নেতাদের কাছেও গেছি। বলেছে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পেলে হয়ে যাবে। কিন্তু আবেদন করা কুড়ি দিন হয়ে গেল এখনও কার্ড পাইনি। কোন নেতা বা জনপ্রতিনিধি আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায়নি। এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক বাদানুবাদ। বিজেপি নেতা রূপেশ আগরওয়াল বলেন, এই সরকারের সমস্ত প্রকল্প ভাওতাবাজি। ভোট হয়ে গেলে এসব প্রকল্প খুঁজে পাওয়া যাবে না। এদিকে এরা কেন্দ্র সরকারের আয়ুষ্মান যোজনা থেকে মানুষকে বঞ্চিত করেছে। আর দুই থেকে তিন মাস বাকি। বিজেপি ক্ষমতায় এসে সোনার বাংলা গড়বে। এদিকে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক তৃণমূল সভাপতি মানিক দাস বলেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড একটা প্রসেসের মধ্যে দিয়ে হয়। শিশুটির কথা আমি শুনেছি। ব্যক্তিগত ভাবে তাদের সাহায্য করেছি। অবশ্যই চেষ্টা করব তাদের পাশে থাকার এবং তারা যাতে দ্রুত সাস্থ্যসাথী কার্ড পেয়ে যায় সেদিকে দেখব। আর বিজেপির কটাক্ষের জবাবে তিনি বলেন, পশ্চিমবঙ্গের ১০ কোটির মধ্যে সাত কোটি মানুষের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রয়েছে। বহু মানুষ এই কার্ডের সুবিধা পাচ্ছে। বিজেপি মিথ্যা কথা বলে কুৎসা করে। ভোট এলেই জাত-পাত বিভেদ নিয়ে রাজনীতি শুরু করে। তবে প্রশাসনের উচিত এই দিকে নজর দেওয়া যাতে ক্যান্সার আক্রান্ত শিশুটি দ্রুত স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পায়। একদিকে মুখ্যমন্ত্রী যখন বলছেন দুয়ারের সরকার প্রকল্পের মাধ্যমে মানুষের বাড়িতে সরকারকে পৌঁছে দেওয়া। এখানে মারণ এই ব্যধিতে আক্রান্ত শিশুটি আবেদন করার পরও এখনো স্বাস্থ্যসাথী কার্ড পাইনি। নেতা এবং জনপ্রতিনিধিদেরও উচিত এই ব্যাপারে দ্রুত নজর দেওয়া।