জলপাইগুড়ি : ময়নাগুড়ি : ১৯ই মার্চ ২০২১ : শুক্রবার : ময়নাগুড়ির সাপ্টিবাড়ির বাসিন্দা কাছুয়া মহম্মদ। বয়স আশি পেরিয়ে গেলেও চোখে মুখে বার্ধক্যের ছাপ নেই লেশমাত্র। জীবন জীবিকার টানে পেশায় পান সুপারির দোকানদার। আর সেই সুবাদে প্রতিবছর ছুটে আসেন জল্পেশ মেলায়। তবে জল্পেশ মেলার সাথে সম্পর্কটা দু-এক দিনের নয়, জীবনের দীর্ঘ ৬৫টি বসন্ত পার করেছেন জল্পেশ মেলার সর্বপ্রাচীন দোকানদার। প্রতিবছরের মতো এবারও এসেছেন।
তাই জল্পেশ মেলার মাছ বাজারের গলিতে ঢুঁ মারলেই যে কারো চোখে পড়বে কাছুয়া দাদুর পান-সুপারির দোকান। তার ঠিক পেছন দিকেই রয়েছে ছোট্ট একটি খুপরি আর সেখানেই মেলার কয়েকদিন অস্থায়ী আস্তানা হয়ে উঠেছে তার। হাসিমুখে দোকানের খদ্দের সামলে সেখানেই রান্নাবান্না ও খাওয়াদাওয়া সেরে রাত কাটাচ্ছেন মেলার দিনগুলিতে। তবে অতীত থেকে বর্তমান দীর্ঘ সময়ের ব্যাবধানে কত কিছুই যে যোগ বিয়োগ হয়েছে তা অকপটে ব্যক্ত করলেন দোকানে বসেই। বহু দিন ধরে মেলায় আসায় যেন নিজের প্রতিচ্ছবির মতোই চোখের পাতায় ফুটে ওঠে মেলার পুরোনো চিত্রটা। তবে অতীতকে বর্তমানের সাথে মেলাতে গেলেই নিজেকে হারিয়ে ফেলেন কাছুয়া দাদু। সময়ের সাথে সাথে পরিসর কমেছে বিশাল মেলার। আধুনিকতার শাসনে অনুষ্ঠান মঞ্চ ঐতিহ্য হারিয়ে আজ পরিনত হয়েছে শুধু নাচ আর গানের মঞ্চে। চিরতরে হারিয়ে গিয়েছে যাত্রাপালা,পালাটিয়া পালাগানের মতো উত্তরের মাটির সংস্কৃতি। গরু, মোষের গাড়িতে চেপে চাল, ডাল, হাড়ি নিয়ে মেলায় আসা আর তাঁবু খাটিয়ে রাত্রিযাপন। সেদিনের সে সব ছবি যেন উধাও হয়ে গেছে সময় নদীর হাত ধরে। পুরোনো আনন্দ, জৌলুস যেন ভাটা পড়েছে ব্যস্ত ঘরির কাঁটার মতোই। আর সবকিছুর সাথে পান-সুপারির চাহিদাও কমেছে আগের মতো। তাই এখন মন সায় না দিলেও শুধু আবেগের টানে মেলায় আসেন মেলার সবচাইতে পুরোনো দোকানদার কাছুয়া মহম্মদ।