জলপাইগুড়ি : ময়নাগুড়ি : ২০শে মার্চ ২০২১ : শনিবার : অল্পের জন্য বড়সড় ডাকাতির হাত থেকে রক্ষা পেল ময়নাগুড়ির পানবাড়ি বাজার। জানা যায়, শুক্রবার রাত আনুমানিক ১২ টা নগাদ ময়নাগুড়ির পানবাড়ি বাজারে পাহারা দেওয়ার জন্য চন্দ্রমোহন রায় এবং দীপক রায় নামে ময়নাগুড়ির থানার দুই সিভিক ভলেন্টিয়ার্স যান। রাত আনুমানিক ১ টা নাগাদ ৬ থেকে ৭ জনের একটি দুষ্কৃতির দল ময়নাগুড়ির পানবাড়ি বাজারে দেখতে পান। দুই সিভিক ভলেন্টিয়ার্স তাদের দেখতে পেয়ে টর্চ লাইটের আলো জ্বালান। এই অবস্থায় দুষ্কৃতী দল থেকেও আলোর টর্চ লাইট জ্বালিয়ে দেখেন। কিন্তু কর্তব্যরত সিভিক ভোলেনটিয়ার্সরা বাজারের পাহারাদার ভেবে নেন। কিন্তু এরপর বাজারের এক গলিতে দুষ্কৃতী এবং দুই সিভিক ভলেন্টিয়ার মুখোমুখি হয়ে যায়।
দুই সিভিক ভলেন্টিয়ার্স তাদের পিঠে এবং হাতে আগ্নেয় অস্ত্র দেখতে পায়। এরপর দুস্কৃতির দলটির মধ্যে দুই জন দীপক রায় নামে সিভিক ভলেন্টিয়ারের উপর চড়াও হয় অন্যদিকে চন্দ্রমোহন রায়ের উপর তিনজন চড়াও হয়। দীপক রায় নামে সিভিক ভলেন্টিয়ার্সকে মারধর শুরু করে দেন দুষ্কৃতীরা। দীপক রায় দৌড়ে পালিয়ে গেলে তার পিছন পিছন দুজন দুস্কৃতি তাকে ধরার উদ্দেশ্যে দৌড়াতে থাকে বলে জানান চন্দ্র মোহন রায়। এরপর দীপক রায়কে ধরতে পেয়ে দুষ্কৃতীরা লাঠি দিয়ে বেড়ধর মার দিয়ে মাথা ফাটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ। অপর সিভিক ভলেন্টিয়ার চন্দ্রমোহন রায়ের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে ভয় দেখাতে থাকে দুষ্কৃতীরা। এরপর চন্দ্রমোহন রায়ের মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভেঙে দেয় দুষ্কৃতীরা। অন্যদিকে দীপক রায়কে একটি বাড়ির কাছে নিয়ে গিয়ে মারধর করলে বাড়ির লোকজন টের পায় এবং লোকজন জেগে ওঠায় দুষ্কৃতীরা ছেড়ে দেয় বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। অন্যদিকে দীপক রায় কে দুষ্কৃতিদের ছেড়ে দেওয়ার পর স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়। পানবাড়ি বাজারে কর্তব্যরত সিভিক ভোলেনটিয়ার্স চন্দ্র মোহন রায় বলেন, আনুমানিক রাত ১ টা নাগাদ বাজারে কয়েকজনকে দেখতে পাই। আমরা ভেবেছিলাম ব্যবসায়ী সমিতির লোকগুলো। এরপর একটি গলিতে যখন সামনা সামনি আসে আমাদের সাথে সাথে দুজনকে ধরে ফেলে। প্রায় ৬-৭ জন দুষ্কৃতি ছিল প্রত্যেকের হাতে বন্দুক এবং লাঠি ছিল। সেই সময় আমার মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ভয় দেখায়। দীপক সে সময় পালিয়ে গেল দুজন তার পিছনে ধাওয়া করে। আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে পুরোপুরি ভেঙে দিয়ে ফেরত দেয়। এরপর কিছুক্ষন পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওরা পালিয়ে যায়। অন্য সিভিক দীপক রায়কে মারধোর করার সময় শব্দ শুনে লোকজন জেগে যান। এই খবর জানতে পেরে স্থানীয়রা বাজারে ভিড় জমায়, এছাড়া খবর পেয়ে ময়নাগুড়ি থেকে বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে চলে আসে। অন্যদিকে দীপক রায় গুরুতর আহত হয় তিনি এখন জলপাইগুড়ি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তার মাথায় ছয়টির মত সেলাই পড়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে ব্যবসায়ীদের সূত্র জানা গেছে, প্রতিদিন রাত্রে সিভিক ভলেন্টিয়ার্স এবং ব্যবসায়ীরা মিলিত হয়ে পানবাড়ি বাজারে পাহারা দিত।
কিন্তু কি কারণে ব্যবসায়ীরা সে দিন পাহারা দিতে বিরত ছিল বলে তা সঠিক জানা যায়নি। পানবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক আনন্দ মন্ডল বলেন, গত রাতে দুজন সিভিক থাকার কারনে বড় ডাকাতির হাত থেকে পানবাড়ি বাজার রক্ষা পেলো। এর আগে লকডাউনের শুরুর দিকে পানবাড়ি বাজারে বড় বড় দুটি চুরি হয়। এরপর ময়নাগুড়ি পুলিশ এবং ব্যবসায়ী সমিতির পক্ষ থেকে রাতে পাহারা দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু শুক্রবার রাতে আমাদের ব্যবসায়ী সমিতির কেউ ছিল না। তারা কেন ছিল না তা আমার জানা নেই। তবে এই নিয়ে বৈঠক আছে। বৈঠক করে বিষয়টি পরিষ্কার হবে। শনিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জলপাইগুড়ির ডিএসপি(ক্রাইম) বিক্রমজিত লামা, ময়নাগুড়ি থানার আইসি ভূষণ ছেত্রী। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে বাজারে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া গিয়েছে। তার ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে ময়নাগুড়ি থানার পুলিশ। অন্যদিকে এদিনের এই ঘটনায় এবং ময়নাগুড়িতে পরপর দুষ্কৃতিদের ট্রাক ছিনতাইয়ের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবে সাধারন মানুষদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। এই বিষয়ে ময়নাগুড়ি থানার আইসি ভূষণ ছেত্রী বলেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।