জলপাইগুড়ি : ময়নাগুড়ি : ১৯শে জুন ২০২১ : শনিবার : যেখানে সভ্যতার আধুনিকীকরণে শহর হতে গ্রামে আজ অনায়াসে মাথা তোলে উঁচু উঁচু একতল কিংবা দ্বিতল ইমারত। ঠিক তার পাশেই যে কঙ্কালসার ছবিটা চাপা পড়ে গেছে তা অকপটেই বলা যায় ময়নাগুড়ির এক অসহায় দরিদ্র দম্পতির করুন দৈন্যদশা দেখলে। ময়নাগুড়ি ব্লকের আমগুড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের জলদানের পাড় এলাকার বাসিন্দা দিনমজুর বরুণ রায়। গত কয়েক বছর থেকে স্থায়ী ভাবে থাকেন নিজের গ্রামেই। সেখানেই একচিলতে ঘরেই ঠাঁই হয়েছে চারটি প্রানের। নেই কোনো শোওয়ার বিছানা। মাটিতে পলিথিন বিছিয়ে ভাঙ্গা ঘরেই দিনপাত করছেন ওই অসহায় দম্পতি। স্বামী-স্ত্রী ও দুই সন্তান মিলে রোদ ঝড়-বৃষ্টিকে হার মানিয়ে বেঁচে থাকার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। নেই জলের ব্যবস্থা, নেই শৌচাগার। মানুষের বাড়ি থেকে ড্রামে জল ভরে এনে স্নান-খাওয়া-বাসন মাজা থেকে শুরু নিত্যদিনের কাজ করছেন এভাবেই। বাড়ির ছোট্ট পরিসরে অভাব বড়ই নিত্যসঙ্গী। ফলে রান্নার যায়গাটুকুও নেই তাদের। ঘরের সামনের এক যায়গায় খোলা আকাশের নিচেই চলে রান্নাবান্না।
এই পরিস্থিতিতেও ছোট্ট ফুটফুটে দুই সন্তানকে নিয়ে জীবনের লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। উল্লেখ্য, বরুণ রায় দীর্ঘ কয়েক বছর মরোঙ্গাতে শশুরবাড়িতে থাকতেন তিনি। সেখানেই ভোটদান করতেন। রেশন কার্ডও রয়েছে সেখানে কিন্তু গত চার বছর আগে পূনরায় নিজের গ্রামে বসবাস শুরু করেন তারা। তাই এখনো এখানে রেশন কার্ড এবং ভোটার কার্ডে নাম না ওঠায় বঞ্চিত থেকেছেন সরকারী পরিষেবাগুলি থেকে। একদিকে বর্তমানে নেই থাকার যায়গা অন্য দিকে করোনা পরিস্থিতি কোপ বসিয়েছে কাজে। এই দুইয়ের মাঝে পড়ে চরম সংকটে পড়েছে পরিবারটি। তাই কি ভাবে দুবেলা দুমুঠো খেতে পেয়ে বেঁচে থাকবেন তা নিয়ে চিন্তিত তারা। শুক্রবার ওই অসহায় পরিবারের খবর পেয়ে সহযোগিতার জন্য পৌঁছে যায় ময়নাগুড়ির প্রয়াস সাথী ওয়েলফেয়ার ওরগানাইজেশনের সদস্যরা। চাল-ডাল-ডিম-সয়াবিন-লবন-তেল সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় যাবতীয় খাদ্যসামগ্রী তুলে দেওয়া হয় পরিবারের হাতে। এই কঠিন সময়ে তাদের সহযোগিতা পেয়ে হাঁসি ফুটেছে ওই পরিবারটির মুখে। তবে এসবেও তাদের কাছে যথেষ্ট নয়। যদি কোন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও সরকারিভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেওয়া হয় তবে আর পাঁচটা পরিবারের মতোই বেঁচে থাকতে পারবে অসহায় পরিবারটি।