উত্তরবঙ্গ নিউজ : জলপাইগুড়ি : ময়নাগুড়ি : ১৮ই জুলাই ২০২১ : রবিবার : শ্রাবণ মাস শুরু হয়ে গেলেও মেলা হবে কি না তা নিয়ে সংশয়ে ছিলেন পুণ্যার্থীরা। করোনার আবহে জল্পেশের শ্রাবণী মেলা ঘিরে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। করোনায় সুস্থতার হার বাড়লেও রোখা যাচ্ছেনা সংক্রমণ। আভাস মিলছে তৃতীয় ঢেউ এর। যার জেরে শ্রাবণী মেলা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জল্পেশ ট্রাস্ট্রি বোর্ড। তবে কোভিড বিধি মেনে পুণ্যার্থীদের জন্য মন্দির খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী অন্যতম প্রাচীন শিব তীর্থ জল্পেশ মন্দিরে বছরের বিভিন্ন সময়ে বেশ কয়েকটি মেলা বসে। তার মধ্যে অন্যতম শ্রাবণী মেলা। শ্রাবণ মাসের পূর্ণ তিথিতে মাসের শুরুতেই মেলার সূচনা হয়। জল্পেশ মেলাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় বহিরাগত কয়েক লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যেক বছর মেলায় ভিড় জমান। এই সময় জেলার পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলির পাশাপাশি ভিনদেশ থেকেও পুণ্যার্থীরা শিবলিঙ্গে জল ঢালতে আসেন। বিশেষ করে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের হিন্দুধর্মাবলম্বী মানুষজন ছুটে আসেন এখানে। রাজ্যের পাশাপাশি সমগ্র উত্তরবঙ্গ ব্যাপী মানুষের কাছে জল্পেশ শ্রাবণী মেলার প্রাধান্য চোখে পড়ে। আষাঢ়ের শেষাশেষি থেকে জেলা প্রশাসন ও মন্দির ট্রাস্টি বোর্ড সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে মেলার প্রস্তুতি শুরু করে দেয়। স্থানীয় ও বহিরাগত বিপুল দর্শনার্থীদের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও মেলার সুষ্ঠু পরিবেশ ও পরিচালনার ব্যাপারে চূড়ান্ত তৎপরতা শুরু হয়ে যায়। তবে এবছরের ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। করোনার কোপে পুরোপুরি বিপর্যস্ত বিশ্ব। হাল ফেরাতে কাল ঘাম ছুটছে বিশ্বের তাবড় তাবড় দেশগুলিতে। সেই দৌড়ে ভারতবর্ষ রয়েছে। করোনা মোকাবিলায় লকডাউন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পরে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে দেশব্যাপী আনলক প্রক্রিয়া। তবে মৃত্যুর হার সাম্প্রতিক কিছুটা কমলেও কার্যত বেলাগাম করোনা সংক্রমণ। আশঙ্কা প্রকাশ পাচ্ছে করোনার তৃতীয় ঢেউ এর। সারাদেশ ব্যাপী বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্যবিধির ওপর।
তাই সম্পূর্ণ স্বাস্থ্যবিধি মেনে শ্রাবণী মেলা পুরোপুরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে পুণ্যার্থীদের জন্য মন্দির খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাস্ট্রি বোর্ড। শ্রাবণী মেলায় বাড়তি ঝুঁকি নেওয়া আদৌ সম্ভব হবে কিনা সে ব্যাপারে ধন্দে রয়েছেন তারা। ইতিহাসে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার আসন্ন শ্রাবণী মেলাকে ঘিরে প্রশাসক থেকে শুরু করে অগণিত ভক্তদের মনে প্রশ্ন চিহ্ন তুলে দিয়েছে। তবে এই মেলা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ীর পেটে টান পড়ে গিয়েছে। অনেক ব্যবসায়ী যারা এই মন্দিরের উপরেই নির্ভর করে সংসার যাপন করতেন। এই অবস্থায় তারা পুনরায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে ছন্দে ফেরার আশা প্রকাশ করেছেন।
জল্পেশ মন্দির ট্রাস্টি বোর্ডের সম্পাদক গিরিন্দ্র নাথ দেব বলেন, এবছর শ্রাবণী মেলা পুরোপুরি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতি ও স্বাস্থ্য বিধি মেনে মন্দির খোলা থাকবে পুণ্যার্থীদের জন্য। করোনার ভয়াবহতা মাথায় রেখেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শ্রাবণ মাসের শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে আগামী রবিবার থেকে উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী জল্পেশ মন্দির ভক্তরা শিবের মাথায় জল ঢালতে আসবেন কিন্তু গত বছরের মতো এবারও বাধা-নিষেধ রয়েছে ভক্তদের জন্য মন্দিরের প্রবেশ খোলা থাকলেও বিধিনিষেধ মেনে চলতে হবে। মন্দিরে মাক্স পড়ে ঢুকতে হবে। ১০ জনের বেশি ঢোকানো হবে না। মন্দিরে প্রবেশ দুই রকমের টিকিট রয়েছে, ২০ টাকা টিকিট ও ১০০ টাকা টিকিট। শ্রাবণী মেলা উপলক্ষে বাবা শিবের মাথায় জল ঢালতে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ,কোচবিহার, মাথাভাঙ্গা, ও অনেক দূর-দূরান্ত থেকে আসা পূণ্যার্থীদের ভিড় দেখা যায়।