উত্তরবঙ্গ নিউজ : মালদা : ১৬ই আগষ্ট ২০২১ : সোমবার : (সংবাদ দাতা : বিশ্বজিৎ মন্ডল ) : শুরু দুয়ারে সরকার প্রকল্প। লক্ষীর ভান্ডারের ফর্ম তুলতে ভিড় বহু মানুষের। চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি। ফর্ম লুটপাট করে নেওয়ার অভিযোগ। এই নিয়ে শুরু হাতাহাতি, মারামারি। অসুস্থ মহিলা সহ প্রায় ৮ জন, পরে এসে পরিস্থিতি সামাল দেয় শাসক দলের নেতা এবং প্রশাসন। ফর্ম না পেয়ে ঘুরে গেলেন বহু সাধারণ মানুষ। যদিও অভিযোগ অস্বীকার প্রশাসনের। মালদহ জেলার হরিশচন্দ্রপুরের বিভিন্ন এলাকায় সোমবার থেকে আবার শুরু হল দুয়ারে সরকার প্রকল্প। নির্বাচনের আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের ঘোষণা করেছিলেন। সেই লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের ফর্ম নিতে ভিড় জমান প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নং ব্লকের সুলতান নগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার হাসিনা হাইস্কুলে শুরু হয় দুয়ারে সরকার প্রকল্পের কাজ। সেখানেই সুলতান নগরের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসে প্রায় কুড়ি হাজার মানুষ। সৃষ্টি হয় চূড়ান্ত বিশৃংখলার। অভিযোগ দুয়ারে সরকার প্রকল্প শুরু হওয়ার পরেই একদল দুষ্কৃতি এসে প্রচুর ফর্ম লুটপাট করে নিয়ে চলে যায়। আর তারপরেই শুরু হয়ে যায় হাতাহাতি, মারামারি। রীতিমতো ধুন্ধুমার পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অসুস্থ মহিলা সহ প্রায় ৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়, অন্যদিকে সকাল থেকে দাঁড়িয়ে ফর্ম না পেয়ে ঘুরে যান বহু সাধারণ মানুষ। ফর্ম লুটপাটের অভিযোগ করেন শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্যদের দিকে। ঝামেলার খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সুলতান নগরের তৃণমূল নেতা মালদা জেলার সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান। আসেন হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নং ব্লকের বিডিও বিজয় গিরি। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাসের নেতৃত্বে বিশাল পুলিশবাহিনীও ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়।
তারপরেই পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ফর্ম না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ বহু সাধারণ মানুষ। যদিও ফর্ম লুটপাট যাওয়ার বা ফর্ম না পাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছে প্রশাসন এবং শাসক দল। তাদের মত, প্রথম দিনে এতটা ভিড়ের ফলে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়েছিল। পরে সেটা ঠিক হয়ে গেছে। ফর্ম দেওয়া এবং জমা নেওয়া দুটো কাজই হচ্ছে। এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি। এদিকে বিশাল পরিমাণ ভিড়ের ফলে শিকেয় উঠে স্বাস্থ্যবিধি। বহু মানুষের মুখে ছিল না মাস্ক। সামাজিক দূরত্বের ছিল না কোনো বালাই। যে সময় দরজায় কড়া নাড়ছে তৃতীয় ঢেউ সেই সময় সরকারি প্রকল্পের কাজে এই ধরনের অসচেতনতার ছবি প্রশাসনিক ব্যর্থতার পরিচয় দেয়। পার্শ্ববর্তী ছত্রক গ্রাম থেকে ফর্ম নিতে আসা করুণা শর্মা বলেন, লক্ষীর ভান্ডার প্রকল্পের জন্য এসেছিলাম ফর্ম তুলতে, কিন্তু পেলাম না। ফর্ম চুরি হয়ে গেছে। পঞ্চায়েত সদস্য কি কারা করেছে বুঝতে পারছিনা। আমরা ফর্ম চাই। ফর্ম নিতে আসা আর এক স্থানীয় বাসিন্দা নারিজা খাতুন বলেন, স্বাস্থ্য সাথী প্রকল্পের জন্য নাম নথিভুক্ত করতে এসেছিলাম। অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে থেকেও ফর্ম পেলাম না। ফর্ম চুরি হয়ে গেছে। মারামারিও লেগে গেছিল, এখন আমাদের বলছে ফর্ম শেষ।
হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নং ব্লকের বিডিও বিজয় গিরি বলেন, প্রথম দিনেই মারাত্মক ভিড় হওয়াতে কিছুটা অসুবিধা হয়েছিল। তবে সেটা সামলে নেওয়া হয়েছে। আমাদের কাছে প্রায় ৫০ হাজার ফর্ম রয়েছে। সকলেই পাবে। ফর্ম চুরি হয়নি। ২০ টা কাউন্টার থেকে দেওয়া হচ্ছে। তৃণমূল জেলা সাধারণ সম্পাদক বুলবুল খান বলেন, প্রথম দিনেই প্রায় কুড়ি হাজার মানুষের ভিড় হয়েছে। এতটা ভিড় হলে একটু বিশৃঙ্খলা হবেই। আমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে সবটা সামলেছি, ফর্ম চুরি হয়নি, সকলেই পাবে।
বিজেপি নেতা কিষান কেডিয়া কটাক্ষ করে বলেন, তৃণমূল সরকার সব কিছুতে ব্যর্থ। এগুলো কোন প্রকল্প না গরিব মানুষকে নিয়ে ছিনিমিনি খেলা। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী বিধিনিষেধের সময় বাড়িয়েছে। নাইট কার্ফিউ চলছে। সেখানে কি ভাবে এত ভিড় এবং বিশৃঙ্খলা হয়।
করোনা কালে সরকারি কাজেই যদি এমন অবস্থা হয় তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। আর সরকারি প্রকল্পের সুবিধা সমাজের প্রান্তিক মানুষেরা পাবে। সেখানে তাদের এসে যদি ঘুরে যেতে হয় এবং প্রকল্পের ফর্ম লুটপাট হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে তার থেকে লজ্জাজনক আর কিছু নেই। সম্পূর্ণ ঘটনা প্রশাসনিক ব্যর্থতা প্রমাণ করে।