28.5 C
New York
Friday, June 20, 2025

Buy now

spot_img

পঞ্চায়েত সমিতিতে বিরোধীদের সমর্থনে সভাপতিকে অপসারণ তৃণমূলের সদস্যদের।

উত্তরবঙ্গ নিউজ : মালদা : ২ রা সেপ্টেম্বর ২০২১ : বৃহস্পতিবার : (সংবাদ দাতা : বিশ্বজিৎ মন্ডল ) : জেলা সভাপতির হুমকিতেও কাজ হল না। কালিয়াচক-২ ব্লকের পর এবার রতুয়া-১ পঞ্চায়েত সমিতিতে বিরোধীদের সমর্থনে সভাপতিকে অপসারণ করলো তৃণমূলের সদস্যরা। এই ঘটনায় মঙ্গলবার জেলা তৃণমূলের সভাপতি আবদুর রহিম বকসির হুমকি যেন অসাড় হয়ে গেল। এনিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলার আশ্বাস দিলেও শাসকদলের একাংশের অভিমত, সেই সাহস হয় তো রহিম সাহেব দেখাতে পারবেন না। কারণ, এক্ষেত্রে মূল অভিযুক্ত খোদ শাসকদলের জেলা চেয়ারম্যান, রতুয়ার বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়। অবশ্য তাঁর একজন সঙ্গীর নামও উঠে আসছে। তিনি জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ হেসামুদ্দিন।

মঙ্গলবার মালদা শহরের বিনয় সরকার অতিথি আবাসে উচ্চস্তরের দলীয় বৈঠক করেছিল জেলা তৃণমূলের নয়া সভাপতি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারম্যান সমর মুখোপাধ্যায়ও। তাঁর উপস্থিতিতেই রহিম বকসি জানান, দলের অনুমতি না নিয়ে কিংবা বিরোধীদের সমর্থনে কোনও গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনে অপসারিত করা যাবে না। তেমন হলে দল প্রয়োজনে ঘটনায় জড়িতদের বহিষ্কার পর্যন্ত করতে পারে। রতুয়ার রাজনৈতিক মহল বলছে, এই পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রায় চার মাস আগে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসা হলেও সভাপতির নির্দেশে এদিনের সভা এড়ানো যেত, কিন্তু তা হয়নি। এবার রহিম সাহেব অভিযুক্ত দলের জেলা চেয়ারম্যান কিংবা সাধারণ সম্পাদকের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ নেবেন সেটাই দেখার।

২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে ৩০ আসন বিশিষ্ট রতুয়া-১ পঞ্চায়েত সমিতির ২৬টি আসন দখল করে তৃণমূল। বাকি চারটি আসনের মধ্যে তিনটি বাম-কংগ্রেস জোট ও একটি নির্দল প্রার্থীর দখলে যায়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হন আবিদা বেগম। বিধানসভা নির্বাচনের আগে পঞ্চায়েত সমিতির ১৮ জন তৃণমূল সদস্য দল থেকে পদত্যাগ করেন। তাঁদের মধ্যে ১০ জন রতুয়া-২ ব্লকের নেতা শেখ ইয়াসিনের হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন। তখন থেকে এই ১৮ জন নির্দল হিসাবে পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য থেকে যান। চার মাস আগে তাঁরা পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী আবিদা বেগমের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আসেন। স্থানীয় তৃণমূল মহলের একাংশের দাবি, এই অনাস্থা প্রস্তাবের মূল কারিগর স্থানীয় বিধায়ক তথা জেলা তৃণমূলের চেয়ারম্যান সমর মুখোপাধ্যায় এবং দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ হেসামুদ্দিন। হেসামুদ্দিনের স্ত্রী আলতাফুন নেশা ও পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য। তাঁকে সভানেত্রী করার জন্যই এই পরিকল্পনা করা হয়েছে বলে খবর।

২০১৮ এর পঞ্চায়েত নির্বাচনে রতুয়া-১ ব্লকের অধীনে থাকা ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েতই যায় শাসকদলের দখলে। বিধানসভা নির্বাচনের পর ১০টির মধ্যে চাঁদমুনি ১ ও ২, সামসী, দেবীপুর ও রতুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধানের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনেন তৃণমূলের সদস্যরাই। প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিরোধীদের সাহায্য নেওয়া হয়। সভার মাধ্যমে ইতিমধ্যে পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতে প্রধান অপসারিত করা হয়েছে। অভিযোগ, প্রতিটি অনাস্থার পিছনেই সমরবাবু ও হেসামুদ্দিন সাহেবের হাত রয়েছে। বুধবার এই অভিযোগ করেছেন খোদ রতুয়া-১ ব্লক তৃণমূল সভাপতি ফজলুল হক। তিনি বলেন, দলের জেলা সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ হেসামুদ্দিন ও বিধায়ক সমর মুখোপাধ্যায়ের মদতে আজ আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি থেকে অপসারণ করা হয়েছে। ১৬ জন সদস্য এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এসেছিল। নির্বাচনে আমরা যে গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি নিজেদের দখলে এনেছিলাম, এখন কৌশলে সেগুলিতে প্রধানদের অপসারণ করা হচ্ছে। বিধায়কই এসব করছেন তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। পঞ্চায়েত সমিতিতে আনা অনাস্থা এড়ানো যেতে পারত। সে কথা আমি বিধায়ক তথা দলের জেলা চেয়ারম্যনকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আমার কথায় কান দেননি। তিনি তো সংগঠনটাই বোঝেন না। কংগ্রেসে থাকাকালীন তিনি বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। অথচ তখনও তিনি বিধায়ক। তাঁর অ-বর্তমানে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হয়েছিলাম আমি। ১৯৯৬ সালের বিধানসভা ভোটে তিনি যে কীভাবে ফের প্রার্থী হয়েছিলেন, জানি না। আমাদের সাহায্য চেয়েছিলেন। তাঁকে ভোটে জিতিয়ে এনেছিলাম। এবারও আমাদের নেতা-কর্মীরাই তাঁকে জিতিয়েছেন। তিনি নিজের ক্যারিশমায় জিততে পারেননি। অথচ এখন তিনিই আমাদের নেতা। তাকে আর কী বলা যাবে।  আজকের ঘটনায় আমি দলের কাছে আবেদন জানাই, যারা দলবিরোধী কাজ করে বিজেপির হাত ধরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে অপসারণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দল কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। অপসারিত পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আবিদা বেগমও জানান, তৃণমূল চেয়ারম্যান সমর মুখোপাধ্যায়ের কৌশলেই আমাকে অপসারণ করা হয়েছে। তাঁকে এই কাজে সাহায্য করেছেন মহম্মদ হেসামুদ্দিন। আমি বিষয়টি দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানাবো। এই ঘটনায় আমি তাঁর কাছে বিচার চাইছি। বিজেপি ও নির্দলের সাহায্য নিয়ে আমাকে অপসারণ করা হয়েছে। এই ঘটনায় দলেরই ক্ষতি হবে।

এনিয়ে সমরবাবুর কোনও প্রতিক্রিয়া না পাওয়া গেলেও মহম্মদ হেসামুদ্দিন বলেন, আজকের সভায় আমাদের ১৭ জন সাথী ভোট দিয়ে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিকে অপসারণ করেছেন। ২০১৮ সালে আমি বন্ধুবান্ধব এবং সাথীদের নিয়ে ভোট করেছিলাম। সদস্যদের মতামত না নিয়েই ব্লক সভাপতি ফজলুল হক বিভিন্ন পঞ্চায়েতে প্রধান ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি নির্বাচিত করেছিলেন। এনিয়ে সদস্যরা দীর্ঘদিন ধরে সমস্যায় ছিলেন। সেই ক্ষোভে পঞ্চায়েত সমিতির অনেকে নির্দল হয়ে যান। তাঁরা আমাকে বিষয়টি জানান। আমি তৎকালীন দলের জেলা সভানেত্রী মৌসম নুরের সঙ্গে এনিয়ে আলোচনা করি। তাঁর পরামর্শেই এই অনাস্থা আনা হয়েছিল। এদিকে জেলা তৃণমূল সভাপতি আবদুর রহিম বকসি বলেন, গতকাল বৈঠকে বসে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যারা দলবিরোধী কাজের সঙ্গে যুক্ত থাকবে, অন্য দলের সদস্যদের সাহায্য নিয়ে দলীয় পঞ্চায়েত প্রধান কিংবা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনবে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ করা হবে। আজকের বিষয়টি নিয়ে আমরা খোঁজখবর নিচ্ছি। এনিয়ে রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গেও আলোচনা করব। তারপরেই কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সম্পর্কিত খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

22,878FansLike
3,912FollowersFollow
14,700SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সাম্প্রতিক খবর

error: Content is protected !!