উত্তরবঙ্গ নিউজ : মালদা : ৩০ শে অক্টোবর ২০২১ : শনিবার : নিজের জমিতে ফসল উৎপাদন না হওয়ায় কৃষি লোন নেওয়া দুই লক্ষ টাকার কিস্তি সময় মতো পরিশোধ করতে পারছিলেন না গাজোলের এক কৃষক। যার ফলে সংশ্লিষ্ট এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই কৃষক ও তার পরিবারকে ক্রমাগত চাপ দিচ্ছিল বলে অভিযোগ। অবশেষে হতাশাগ্রস্ত হয়ে ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক ম্যানেজারের সামনে বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা চালালো ওই কৃষক। এই ঘটনার সমস্ত সিসিটিভির ফুটেজ ব্যাংক কর্তৃপক্ষের কাছে রয়েছে বলে দাবি করেছেন আহত কৃষকের পরিবার। শনিবার বিকেলে চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে গাজোল থানার আলমপুর এলাকার একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে। এদিকে এই ঘটনার পর সংকটজনক অবস্থায় ওই কৃষককে চিকিৎসার জন্য ভর্তি করানো হয়েছে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। পাশাপাশি এই ঘটনায় গাজোল শাখার ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এবং জখম কৃষকের পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অসুস্থ কৃষকের নাম প্রতাপ চন্দ্র ঘোষ (৩৪)। তার বাড়ি আলমপুর ঘোষপাড়া এলাকায়। পরিবারে স্ত্রী সোনালি ঘোষ ছাড়াও ১১ এবং ১২ বছর বয়সী দুই নাবালিকা মেয়ে রয়েছে। প্রতাপবাবুর নিজের প্রায় ১০ বিঘা জমি রয়েছে। ফসল উৎপাদনের জন্য ২০২০ সালে সংশ্লিষ্ট এলাকার ওই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক থেকে দুই লক্ষ টাকা কৃষি লোন নিয়েছিলেন। কিন্তু ভালো ফসল উৎপাদন না হওয়ায় সেই লোনের কিস্তির টাকা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে দিতে পারছিলেন না বলে অভিযোগ। এনিয়ে ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ প্রতাপবাবুর পরিবারকে নিয়মিত চাপ দিচ্ছিল বলে অভিযোগ উঠে। অসুস্থ কৃষকের স্ত্রী সোনালি ঘোষ জানিয়েছেন, বাড়িতে চিকিৎসার জন্য কিছুদিন আগেই স্বামী প্রতাপ চন্দ্র ঘোষ একটি জমি বিক্রি করে। যার দরুন কয়েক লক্ষ টাকা মিলে। সেই চেক দু’দিন আগেই এলাকারই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ লোনের টাকা শোধ না করতে পারায় সেই চেক আটকে দেয়। আমরা অনেক অনুরোধ জানিয়ে ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে বলি সামান্য কিছু টাকা দিয়ে আমাদের উদ্ধার করুন। পরে লোনের টাকা শোধ করে দেওয়া হবে। কারণ, বাড়িতে অসুস্থ মানুষ রয়েছে, চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোন রকম ভাবে আমাদের কথায় গুরুত্ব দিতে চায় নি। অবশেষে হতাশ হয়েই আমার স্বামী সকলের সামনেই ব্যাংক ম্যানেজারের উপস্থিতিতেই কীটনাশক খেয়ে আত্মঘাতী হওয়ার চেষ্টা করে। পুরো ঘটনাটি নিয়ে আমরা ভেঙে পড়েছি। সংকটজনক অবস্থায় মেডিকেল কলেজে আমার স্বামীর চিকিৎসা চলছে। এদিকে এই ঘটনায় রীতিমতো অসন্তোষ ছড়িয়েছে আলমপুর এলাকা গ্রামবাসীদের মধ্যে। শনিবার রাতেই অসুস্থ কৃষকের সঙ্গে দেখা করেন গ্রামের বাসিন্দারা। সোমবার ওই ব্যাংক কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধের হুমকিও দিয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা। তাঁরা বলেন, মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যেখানে কৃষি লোনের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কথা বা সমস্যায় পড়লে তদারকি করে মকুব করার কথা বলছেন। সেখানে এভাবে ব্যাংক কর্তৃপক্ষের জোর-জুলুম কোনো ভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এদিকে যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের গাজোল ব্লকের আলমপুর শাখার কর্তৃপক্ষ মুখে কুলুপ এঁটেছে। তারা এ ব্যাপারে কোন রকম মন্তব্য করতে চান নি। যদিও ওই কৃষকের পরিবারের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট এলাকার এসবিআই শাখা ম্যানেজারের চাপে পড়েই কৃষক প্রতাপ চন্দ্র ঘোষ এই আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে।