উত্তরবঙ্গ নিউজ : জলপাইগুড়ি : ধুপগুড়ি : ১ লা নভেম্বর ২০২১ : সোমবার : চুক্তিতে ধান কেটে শ্যামা পুজোর খরচ জোগাচ্ছে ধূপগুড়ির ধাপের ডাঙ্গা হরিমন্দির পূজা কমিটি। ধূপগুড়িঃ লোকের বাড়িতে ঘুরে নয়, হেমন্তের সোনালি ধান কেটে শ্যামা পুজোর খরচ জোগানোর উদ্যোগ নিয়েছে ধূপগুড়ি ব্লকের গাদং ১ অঞ্চলের পূর্ব ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ধাপের ডাঙ্গা শ্যামা পূজা কমিটি। নিত্য ব্যবহার্য জিনিসপত্রের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের নাভিশ্বাস উঠেছে। তার ওপর লকডাউনে বিপর্যস্ত গ্রামীণ অর্থনীতি। সাধারণ মানুষের দুয়ারে পুজোর চাঁদা তুলতে গেলে নানান সমস্যার কথা শুনতে হয়। যে কারণে কমিটির সদস্যরা মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে ধান কেটে পুজোর খরচ তোলা হবে। দশ বিঘা ধানক্ষেতের পাঁকা ধান, শান দেওয়া কাস্তে দিয়ে কাটছে যোগেশ, সুমিত, মানব, জিৎ, উত্তম, বিরাট সহ পনেরো ষোল জনের তরুণের দল। এদের কেউ স্কুল পড়ুয়া আবার কেউ কলেজে পড়ে। কেউ বা কলেজ ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় যুক্ত হয়েছে। হেমন্তের সকালে শিশিরে ভেজা সোনালি ধান ক্ষেতে এসে দল বেঁধে ধান কাটার কাজ করছে ওরা কয়েকজন। ইতিমধ্যে দুই বিঘার বেশি ধান কেটে ফেলেছে। বিঘা প্রতি বারোশো টাকা চুক্তিতে ধান কাটার কাজ করছে। কমিটির সদস্য বীরাপ্পন রায় বলেন, বারোশো টাকা বিঘা প্রতি মোট দশ বিঘা জমির ধান আমরা কাটবো। স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের জমিতে ধান কাটছি। বৃহস্পতিবার পুজো, তার আগেই আমাদের হাতে টাকা আসবে এমন চুক্তি করেই ধান কাটছি। এই টাকার সঙ্গে সদস্যদের ব্যক্তিগত চাঁদা দিয়ে আমরা খুব সাধারণ ভাবে পূজা আয়োজন করছি। অমাবস্যার রাতে পুজোর পর পরদিন সকাল থেকে চলে প্রসাদ বিতরণ। খিচুড়ি খাওয়ানো হয় দর্শনার্থীদের।
করোনার কারণে পরপর দুই বছর লকডাউনে গ্রামীণ অর্থনীতি বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পূজা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য দয়াল রায় ধান কাটতে কাটতে বলেন, এবছর মানুষের হাতে টাকা পয়সা নেই, জিনিসপত্রের যা দাম সেই হিসেবে রোজগার নেই। ফলে মানুষের বাড়িতে চাঁদার জন্য গেলে অনেকে অনেক রকম কথা বলে। আর এক সদস্য হেমন্ত রায় বলেন, গ্রামাঞ্চলে ছোটখাটো পূজার সংখ্যা বাড়ছে, চাঁদা সংগ্রহ করার জন্য নিত্যদিন কমিটিগুলো বাড়ি বাড়ি ঘুরছে। চাঁদা দিতে দিতে মানুষও বিরক্ত হচ্ছে। তাই আমরা সবাই মিলে উদ্যোগ নিয়েছি ধান কেটেই পূজার চাঁদা তুলবো। ধূপগুড়ির পূর্ব ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের ধাপের ডাঙ্গা আসলে উঁচু জমি, এক সময় জঙ্গল ভরা ছিল সেখানে। বিভিন্ন পুজো ও অনুষ্ঠান আয়োজিত হতো সেখানে। বর্তমানে শ্যামা পুজোই আয়োজন করা হয়। ধাপের ডাঙ্গা শ্যামা পূজা আয়োজন কমিটির সম্পাদক বিনোদ রায় বলেন, অনেকদিন থেকেই এখানে বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান এখানে হয়ে আসছে। মাঝখানে সমস্ত কিছুই আয়োজন করা বন্ধ ছিল। আমরা যুবকেরা মিলে চেষ্টা করছি এখানকার পুরনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে।