উত্তরবঙ্গ নিউজ : জলপাইগুড়ি : ১৫ ই নভেম্বর ২০২১ : সোমবার : রবিবার রাতে টানা সাত ঘন্টা ড্রাইভিং চালিয়ে বুনো হাতি দুটিকে অক্ষত অবস্থায় জলপাইগুড়ি শহর থেকে বৈকন্ঠপুর জঙ্গলে ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হোলো বনদপ্তর। অবশেষে লোকালয় ত্যাগ করে জঙ্গলে ফিরলো বুনো হাতি।
শনিবার রাত দুটো নাগাদ বৈকন্ঠপুর পুর জঙ্গল থেকে দুটি বুনো হাতি জলপাইগুড়ি শহরে ঢুকে গিয়েছিল। এরপর তারা জলপাইগুড়ি পৌর এলাকার কয়েকটি ওয়ার্ড ঘুরে আশ্রয় নেয় জলপাইগুড়ি পৌর এলাকার ২১ নং ওয়ার্ডে থাকা কবর স্থানে। সেখানে প্রচুর গাছ গাছালি থাকায় রবিবার দিনভর সেখানকার গাছ পালা খেয়ে থেকে যায় বুনো হাতি দুটি। অপরদিকে হাতি শহরে ঢোকার খবর পেয়ে ছুটে আসে জেলার বিভিন্ন রেঞ্জের বনকর্মীরা। ছুটে আসে প্রায় সমস্ত এলিফ্যান্ট স্কোয়াডের টিম। শুক্না থেকে আসে স্কোয়াড। জলদাপাড়া থেকে নিয়ে আসা হয় ঐরাবত গাড়ি সহ পুরো স্কোয়াডটিকে। খবর পেয়ে আসেন বনদপ্তরের বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিকেরা। আসে পুলিশ ও পরিবেশ কর্মীরা। দিনভর ঘটনাস্থলে দাড়িয়ে থেকে হাতির গতিবিধির উপর লক্ষ রাখতে থাকেন জলপাইগুড়ি বনবিভাগের ডি এফ ও মৃদুল কুমার। অপরদিকে বেলা বাড়ার সাথে সাথে শহরে হাতি ঢুকেছে এই খবর চাউর হতেই এই এলাকায় মানুষের ভিড় জমতে শুরু হয়। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়। এরপর বন দপ্তরের বিভিন্ন অফিসার, পুলিশ ও পরিবেশ প্রেমী সংগঠনের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয় সন্ধ্যা নামলে শুরু করা হবে ড্রাইভিং। চেষ্টা করা হবে হাতি দুটিকে ড্রাইভ করে করলা নদী পার করিয়ে জাতীয় সড়কে তুলতে। এরপর জাতীয় সড়ক পার করে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে জঙ্গলে। এই চেষ্টা ব্যার্থ হলে ঘুমপাড়ানি গুলি ছুড়ে তাদের কাবু করে তাদের ক্রেনের সাহায্যে লড়িতে তুলে পাঠানো হবে জঙ্গলে। সেই অনুযায়ী প্রস্তুতিও নিয়ে নেয় বনদপ্তর।
বিকেল ৫ টা নাগাদ সূর্য লাল হয়ে পশ্চিমাকাশে ঢলে পড়লে শুরু হয় হুটার বাজিয়ে, বাজী ফাটিয়ে হাতি ড্রাইভিং এর কাজ। হাতি দুটি তাড়া খেয়ে নদীতে নামে। কিন্তু আবার অন্য দিক থেকে তাড়া খেয়ে ফের আশ্রয় নেয় কবরস্থানে। এরপর আবার তাড়া দিলে নদী পেরিয়ে চলে যায় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের দিকে। অপরদিকে জাতীয় সড়কে হাতি উঠেছে এই খবর ছড়িয়ে পড়তে রাত ৮ টা থেকে মানুষের ঢল নামে এলাকায়। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশের পক্ষ জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ করা হয়। মাইকিং করে বন্ধ করে দেওয়া হয় দোকানপাট, সরিয়ে দেওয়া হয় জাতীয় সড়কের ওপর দাড়িয়ে থাকা মানুষদের। এইভাবে দীর্ঘক্ষন ড্রাইভিং চালাবার পর প্রায় রাত বারোটা নাগাদ হাতি দুটিকে ৩১ নং জাতীয় সড়ক পার করিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয় বৈকন্ঠপুর জঙ্গলে।