উত্তরবঙ্গ নিউজ : দক্ষিণ দিনাজপুর : ২৫ শে নভেম্বর ২০২১ : বৃহস্পতিবার : হিমেল হাওয়া ও হালকা কুয়াশায় দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায় এখন শীতের আমেজ চলছে। শীত মৌসুম শুরুর সঙ্গে ব্যস্ত হয়ে উঠেছে দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ। শুরু হয়েছে শীতের মধু অর্থাৎ খেজুর রস আহরণ। এই রস আহরণে গাছিরা এখন ব্যাস্ত।
এই মৌসুমে আবহমান বাংলায় খেজুর রস আহরণ, খেজুর গুড় আর নবান্নের উত্সব একটি প্রাচীন ঐতিহ্য। আর খেজুর রসের পিঠা পায়েস বাংলার উপাদেয় খাদ্য তালিকায় এখনও জনপ্রিয়। গাছিরা জানান, বছর জুড়ে অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকলেও শীতকালে চাষিদের কাছে খেজুর গাছের কদর বেড়ে যায়। কারণ এই গাছ থেকেই আহরিত হয় সুমিষ্ট রস। আর এই রস জ্বালিয়ে ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও পাটালি তৈরি করা হয়। খেজুরের গুড় থেকে এক সময় বাদামি চিনিও তৈরি করা হত। যার মৌতানো স্বাদ ও ঘ্রাণ সর্ম্পূণ ভিন্ন। খেজুর গাছের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে-যত বেশি শীত পড়বে তত বেশি মিষ্টি রস দেবে। শীতের সকালে খেজুর রসপান শরীর ও মনে প্রশান্তি এনে দেয়।
কৃষকরা নতুন ধান সংগ্রহের পাশাপাশি খেজুর রস আহরণের প্রস্তুতি শুরু করেছে। এখন চলছে খেজুর গাছের ডগা চাছার কাজ। এরপর চাছা ডগায় বাশের তৈরি বিশেষ নল লাগিয়ে সংগ্রহ করা হবে ফোটায় ফোটায় রস। মাটির হাড়িতে খেজুর রস সংগ্রহ করা হয়। তবে আজকাল প্লাস্টিকের বোতলেও খেজুর রস আহরণ করে চাষিরা। শীতের পুরো মৌসুম জুড়ে চলবে রস, গুড়, পিঠা-পুলি,পায়েস খাওয়ার পালা। আর কিছুদিন পর নতুন গুড়ের মিষ্টি গন্ধে ধীরে ধীরে আমোদিত হয়ে উঠবে গ্রাম-বাংলা। দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার বাউল এলাকার গাছি মিন্টু বসাক জানান, গাছের ডগা চেছে বাশের খিল লাগানোর কাজ চলছে। অল্পদিনের মধ্যেই রস আহরণ শুরু হবে। খেজুর গাছ অর্থনীতিতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। এর পরিকল্পিত আবাদ তেমন নেই। উপরন্তু নির্বিচারে খেজুর গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। যা পল্লী বাংলার পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। দিন বদলের সঙ্গে মানুষের জীবন-যাত্রায় অনেক কিছু বদলে গেলেও বদলায়নি খেজুরের রস সংগ্রহ এবং গুড়-পাটালি তৈরির পদ্ধতি। তাই শীতের আগমনী বার্তা জানান দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এখানকার গাছিরা প্রস্তুতি নেন খেজুর গাছ থেকে রস সংগ্রহের। এই জন্য প্রথমেই খেজুর গাছের দাল ও পাতা ছেটে পরিষ্কার করেন তারা। এরপর শুরু হয় রস সংগ্রহ। চিরাচরিত সনাতন পদ্ধতিতে মাটির ভাঁড়ে (কলসি) রাতভর রস সংগ্রহ করা হয়। সূর্য ওঠার আগেই তা আবার গাছ থেকে নামিয়ে আনে তারা। পরে এই রস মাটির হাঁড়িতে কিংবা টিনের তৈরি কড়াইয়ে জ্বালিয়ে তৈরি করে গুড়-পাটালি। ইতিমধ্যে জেলার নানান জায়গায় শুরু হয়েছে গুড়-পাটালি তৈরির প্রক্রিয়া।গাছিরা এখন কাজের ব্যস্ততার মধ্যে সময় কাটাচ্ছেন। অল্প দিনের মধ্যেই বাজারে পাওয়া যাবে নতুন খেজুর গুড়। আসন্ন পৌষপার্বন-পুষনা বা পীঠেপুলির উত্সবে এই খেজুর গুড় ও রস নতুন মাত্রা আনবে গ্রামের গৃহস্থদের রসুইখানায়।