উত্তরবঙ্গ নিউজ : জলপাইগুড়ি : মালবাজার : ২২ শে জানুয়ারী ২০২২ : শনিবার : যে মানুষটা একটা সময়ে শহরের পথ ঘুরে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতেন খবর, যার হাত ধরেই মালবাজার ও ডুয়ার্স এলাকায় সাংবাদিকতার পথ চলা শুরু হয়েছিল আজ সেই পরিবার কার্যত অনাহারে। শহরের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের দৈনিক বাজারের পাশেই অবস্থিত ছোট কাঠের ঘরে কোনও রকমে স্ত্রীকে নিয়ে দিনযাপন করছেন ৬৭ বছর বয়স্ক প্রাক্তন সাংবাদিক অশোক ছরছরিয়া। আজ বার্ধক্যে এসে কার্যত অসহায় নিঃসন্তান অশোকবাবু ও তাঁর স্ত্রী। স্টেশন রোডের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল ভাঙা লোহার খাটে বাঁশের বেড়া দেওয়া ঘরে বসে রয়েছেন বৃদ্ধ অশোকবাবু। কথা শুরু করতেই অশ্রুভেজা কণ্ঠে উঠে এলো পুরোনো দিনের বহু স্মৃতি।
১৯৯৭ সালে একটি হিন্দি দৈনিক পত্রিকায় সাংবাদিক হিসেবে লেখালেখি শুরু করেন তিনি। অশোকবাবুর বাবা তথা স্বর্গীয় মহাবীর ছরছরিয়া মালবাজার শহর ও ডুয়ার্স এলাকার সাংবাদিক হিসেবে পরিচিত নাম। পরবর্তীতে বাবার কাজের পথকেই অনুসরণ করে সাংবাদিকতা পেশায় নিজেকেও জড়িয়ে ফেলেছিলেন তিনি। একদা সেই তরতাজা যুবক আজ বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত। কার্যত স্ত্রীকে নিয়ে অনাহারেই দিন কাটছে তাঁর। অশোকবাবু জানান, এক সময়ের সহকর্মী তথা এলাকার সাংবাদিকরা আজ কেউই কোনও খোঁজখবর নেন না। তাঁর আরও বক্তব্য, কয়েক বছর আগে পুরসভার উদ্যোগে এককালীন কিছু আর্থিক অনুদান এবং প্রতিমাসে দুই হাজার টাকা মাসিক ভাতা হিসেবে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন প্রাক্তন পুরপিতা এবং বর্তমান পুর প্রশাসক বোর্ডের চেয়ারপার্সন স্বপন সাহা। প্রথম তিনমাস নিয়মিতভাবে ভাতা পেলেও পরবর্তীতে তাও অনিয়মিত হয়ে পড়ে, বর্তমানে তা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ। অপরদিকে দুয়ারে সরকার প্রকল্পর মাধ্যমে বার্ধক্যভাতার আবেদন করলেও তা এখনও পর্যন্ত পাননি তিনি। আর এতেই আরও দিশেহারা অবস্থায় রয়েছেন ওই বৃদ্ধ সাংবাদিক।
অসহায় এই সাংবাদিকের পাশে দাড়ালো শিলিগুড়ির জার্নালিস্ট ক্লাব। শুক্রবার রাতে আর্থিক সাহায্য করলো শিলিগুড়ি জার্নালিস্ট ক্লাবের সদস্যরা। শিলিগুড়ি জার্নালিস্ট ক্লাবের সভাপতি অংশুমান চক্রবর্তী জানান, আমাদের প্রাক্তন সহকর্মী মাল বাজারের অশোক ছড়ছড়িয়ার দুরবস্থার কথা শুনে আমরা সদলবলে পৌঁছে গিয়েছিলাম অশোকদার বাড়িতে। আমাদের দেখেই আশোকদার ভেঙে পড়া মানসিক শক্তি দ্বিগুণ হয়ে যায়। বারবার বলেন কয়েকদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে যাব তারপর তোমাদের সঙ্গে আমি খবর করতে যাব। আমার মাথার উপর হাত রাখার কেউ ছিল না। এখন বুঝলাম গোটা উত্তরবঙ্গ আছে। এদিন উনার চিকিৎসার জন্য ২৮ হাজার টাকা অশোক ছরছরিয়ার হাতে তুলে দেই। উত্তরবঙ্গ ও সিকিমের সাংবাদিকদের সংগঠনগুলির একত্রিত সংগঠন কনফেডারেশন অফ নর্থ বেঙ্গল এন্ড সিকিম জার্নালিস্টস এর পক্ষ থেকে আমরা সামান্য কিছু আর্থিক অনুদান অশোকদার হাতে তুলে দিলাম।