উত্তরবঙ্গ নিউজ : জলপাইগুড়ি : ময়নাগুড়ি : ২৪ শে জানুয়ারী ২০২২ : সোমবার : রবিবার এবং সোমবার দক্ষিণ মৌয়ামারি গ্রামে দুর্ঘটনাস্থলে ব্যাগ খুঁজতে এসে গুয়াহাটিগামী বিকানির এক্সপ্রেসের যাত্রী প্রসেনজিৎ বর্মণ বললেন, ভগবানের কৃপায় দুমড়ে মুচরে যাওয়া কামরা থেকে প্রাণে বেঁচেছি আমরা। সেদিনের সেই দিনের কথা মনে পরলে আজও গায়ে কাঁটা দেয় বলে জানায় সে। যেন মনে হচ্ছে পূণর্জন্ম পেলাম। মনকে শক্তকরে এদিন তিনি এসেছেন তাদের সাথে থাকা দরকারী কাগজ-পত্র ও ব্যাগ খুঁজতে। এদিন দুর্ঘটনাগ্রস্ত স্থানে অস্থায়ী আরপিএফ ক্যাম্প থেকে প্রসেনজিৎএর হাতে হারিয়ে যাওয়া কাগজ পত্র তুলেদেন এক আধিকারিক। অভিযোগ উঠেছে, দুর্ঘটনাগ্রস্থ ট্রেনের সামনে আধার কার্ড, ভোটের ফটো, ব্যাংকের বই পাওয়া ও একটি ছোট ব্যাগ এদিন পাওয়া গেলেও ব্যাগে থাকা ১৩ হাজার টাকা পায় নি প্রসেনজিৎ। অপর দিকে ট্রেনে এখনও ব্যাগগুলি রয়েছে বলে জানায় সে। যদিও আরপিএফ জানিয়েছে, তাদের হাতে ব্যাগ দিয়ে দেওয়া হবে।
গত বৃহস্পতিবার প্রসেনজিৎ বর্মণ তাঁর বাবা, মা, ভাই ও দিদার সাথে জয়পুর থেকে গ্রামের বাড়ি কোচবিহার জেলার পুন্ডিবাড়ি এলাকার কাঁঠালবাড়ি গ্রামে ফিরছিলেন। তাঁরা তাদের পরিবার সহ জয়পুরে থাকেন। তাঁর বাবা গোবিন্দ বর্মণ সেখানে রঙের কাজ করেন। তিনি একটি গ্যারেজে কাজ করেন। তাদের বাড়িতে বাৎসরিক কালীপূজো হয়। সেই পূজোর জন্য তাঁরা পরিবার সহ বাড়ি ফিরছিলেন। তাদের বাড়ির কালী মা তাদের রক্ষা করেছে বলে তাঁরা জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার দক্ষিণ মৌয়ামারি গ্রামের রেললাইনে ট্রেন দূর্ঘটনার পর প্রসেনজিৎ কোন ভাবে বাইরে বেড়িয়ে এসেছিল। তাঁর সাথে তাঁর বাবা, মা কামরা থেকে বেড়িয়ে এলেও খোঁজ মিলছিল না ভাই ও দিদার। বেশ কয়েক মিনিট পর হঠাৎ ট্রেনের কামরা থেকে ভেসে এসেছিল ভাইয়ের চিৎকার, ‘দাদা আমাকে বাঁচা’। এর কিছু সময় পর দিদার চিৎকার শোনা গিয়েছিল। ভাইকে কিছু সময়ের মধ্যেই কামরা থেকে তাঁরা বের করতে পারলেও দিদাকে তাঁরা বের করতে পারে নি। দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া ট্রেনের কামরায় আটকে গিয়েছিলেন তিনি। পরে উদ্ধার কর্মীরা এসে তাঁকে কামরা থেকে উদ্ধার করে। প্রসেনজিৎআরও বলেন, সে দিনের রাতের কথা মনে পরলে এখনও ভয়ে শরীর ঠান্ডা হয়ে আসে।
শিলিগুড়ি পার হওয়ার পর থেকে ট্রেনে কেমন যেন আওয়াজ হচ্ছিল। তিস্তা পার হওয়ার পর ঝাকুনি শুরু হয়। সে সময় ও আমরা আনন্দেই আসছিলাম। বাড়ি ফিরব এই আনন্দে সকলে মজায় ছিলাম। দোমহনী পার হওয়ার পর একটা বিকট শব্দ তাঁর পরেই ট্রেন উলটে যায়। চারিদিকে শুধু ধূলো আর ধূলো। সে সময় শরীর থেকে যেন আত্মা বেড়িয়ে যাওয়ার উপক্রম। এক সময় ভেবেছি আর বেঁচে ফিরতে পারব না। দিদা ও ভাইকে না পেয়ে আমদের কান্নাকাটি শুরু হয়ে যায়। অনেক পরে তাদের আওয়াজ পেয়েছি। আমরা এস১০ নম্বর কামরায় ছিলাম। আমাদের ব্যাগ খুঁজতে এসেছিলাম। ট্রেনের কামরার এক পাশে আমাদের কাগজ পেয়েছি। দিদার ব্যাগ পেয়েছি, কিন্তু ব্যাগে থাকা টাকা পাই নি। ১৩ হাজার টাকা ছিল ছোট একটি ব্যাগে। আমরা ৪ বছর ধরে জয়পুরে কাজ করি। বহু কষ্টে অর্থ উপার্জন করি। টাকা হারিয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু আমরা তো বেঁচে আছি এটাই আমাদের কাছে বড় বিষয়। দিদার পা ভেঙ্গে গেছে। তিনদিন জলপাইগুড়িতে ভর্তি ছিলেন। এখন ট্রেন দেখলেই ভয় লাগে।