উত্তরবঙ্গ নিউজ : মালদা : ৩ রা ফেব্রুয়ারী ২০২২ : বৃহস্পতিবার : এক অনাথ যুবতীর বিয়ে দিয়ে বাবা-মায়ের ভূমিকা পালন করল পুলিশ আধিকারিকরা। বাবা-মা হীন প্রেমিকার সঙ্গে এলাকার এক যুবকের দীর্ঘদিন ভালোবাসার সম্পর্ক। কিন্তু প্রেমিকা এবার বিয়ের জন্য চাপ দিতেই বেঁকে বসে যুবক। প্রেমিকের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ জানায় প্রেমিকা। তারপরই পুলিশের প্রচেষ্টায় রীতিমতো ডিজে বাজিয়ে ওই পিতা-মাতা হীন যুবতীর সাথে বিয়ে দেওয়া হয় অভিযুক্ত যুবকের। এমনটাই নজিরবিহীন ঘটনা ঘটেছে মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার কুমেদপুর গ্রামে। হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশের উদ্যোগে রীতিমতো ডিজে বাজিয়ে কুমেদপুর পুলিশ আউটপোস্ট প্রাঙ্গণে অনাথ যুবতীর সাথে ওই যুবকের বিয়ে দিল পুলিশ কর্তারা।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সোনা দেবী সিং(২৩) এর বাড়ি কাঠিয়ার জেলায়। অন্যদিকে শঙ্কর সাহানী(২৫) নামে অভিযুক্ত যুবকের বাড়ি দ্বারভাঙ্গা জেলাতে। দুজনে একটি কুমেদপুর এলাকার মাখনার ফড়িতে কাজ করতো। সোনা দেবী সিং নামে যুবতীটি দীর্ঘদিন আগে তার বাবা মাকে হারিয়েছে। ওই মখনার ফড়িতে কাজ করতে করতেই ওই যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সুযোগে ওই যুবক তরুণীকে বিয়ের প্রতিশ্রুতিও দেয়। এই ঘটনার কথা এলাকার সমস্ত লোকই জানতো। কিন্তু ওই যুবতী শঙ্কর সাহানী কে বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে থাকলে অভিযুক্ত যুবক সোনা দেবীকে বিয়ে করতে অস্বীকার করে। আগামী জীবনের কথা ভেবে অসহায় হয়ে যায় ওই যুবতী। এরপরই সোনা দেবী সিং কুমেদপুর ফাড়িতে পুলিশ আধিকারিকদের দ্বারস্থ হয়। সেখানে যুবতীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই যুবককে থানায় ধরে নিয়ে আসা হয়। তারপরই হরিশ্চন্দ্রপুর থানা আইসি সঞ্জয় কুমার দাস ও অন্যান্য পুলিশ আধিকারিকদের উদ্যোগে থানা প্রাঙ্গণে গড়ে তোলা হয় বিয়ের মন্ডপ, আনা হয় ডিজে ব্যান্ড পার্টি। এরপরে রীতিমতো মালাবদল করে থানা প্রাঙ্গণে আধিকারিকদের সহায়তায় ওই অনাথ যুবতীর বিয়ে দেওয়া হয় অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে। এরপরে স্থানীয় একটি মন্দিরে নিয়ে গিয়ে হিন্দু মতে ভগবানকে সাক্ষী করে বিয়ে দেওয়া হয়। আর এই নজিরবিহীন ঘটনার ফলে পুলিশের এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা।
হরিশ্চন্দ্রপুর থানার আইসি সঞ্জয় কুমার দাস জানান, যুবতী থানায় এসেছিল কাঁদতে কাঁদতে, যুবতীর বাবা-মা কেউ নেই, পুরো ঘটনা শোনার পর যুবককে উঠিয়ে নিয়ে আসা হয়। যুবক পুরো ঘটনার কথা স্বীকার করে নেয়, তারপরেই থানার উদ্যোগে অনাথ যুবতীর বিয়ের ব্যবস্থা করা হয় পুলিশের তরফে। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল মতিন বলেন, ছেলেটি এবং মেয়েটি অনেক দিন ধরে প্রেম করতো। তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু বিয়ে করতে রাজি হলেও পরে ছেলেটি বিয়ে করছিল না। মেয়েটির মা-বাবা নেই। পুলিশ যেভাবে সমস্যার সমাধান করল তা প্রশংসনীয়। স্থানীয় বাসিন্দা সামিউল আক্তার বলেন, ছেলেটি ও মেয়েটি প্রেম করতো। কিন্তু ছেলেটি বিয়ে করতে চাইছিল না। তাই মেয়েটি পুলিশকে জানায়। পুলিশ সব ঘটনার তদন্ত করে তাদের বিয়ে দেয়। আইনের রক্ষক পুলিশকে সাধারণত সবাই ভয় করে চলে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা গেল পুলিশকে অন্য ভূমিকায়। অভিভাবক রূপে পুলিশের ভূমিকায় একটি সম্পর্ক পরিণত রূপ দিল। স্বভাবতই তাই খুশি এলাকাবাসী।