উত্তরবঙ্গ নিউজ : মালদা : ২ রা ফেব্রুয়ারী ২০২২ : বুধবার : সরকারি জমিতে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলা হলো। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার অভিযোগে প্রশাসনের মামলা রুজু। গ্রেফতার বিজেপি কর্মী। ভূমি সংস্কার দপ্তর আধিকারিকের বিরুদ্ধে তদন্তের পাশাপাশি কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বড় বড় সাপ বেরিয়ে আসবে দাবী স্থানীয়দের। শুরু রাজনৈতিক তরজা।
খবরের জেরে অবশেষে নড়েচড়ে বসল প্রশাসন। খবর প্রকাশের পরই প্রশাসনিক তদন্ত শেষে বুধবার মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের আইটিআই কলেজ এলাকার পার্শ্ববর্তী একটি সরকারি জমিতে অবৈধ নির্মাণ গুড়িয়ে দিল হরিশ্চন্দ্রপুর ভূমি সংস্কার দপ্তর। এমনকি ওই জমি পাট্টা তে পাওয়া নন্তু দাসকে বেআইনি ভাবে সরকারি জমি বিক্রি করার অপরাধে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নন্তু দাস ও শেখ বাবুলের বিরুদ্ধে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করার মামলা করেছে পুলিশ। জানা গেছে, নন্তু দাস নামে ওই পাট্টা প্রাপক এলাকার সক্রিয় বিজেপি কর্মী। উল্লেখ্য হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার আইটিআই কলেজের পাশে নন্তু দাস নামে ওই বিজেপি কর্মীর বাবার নামে একটি পাট্টা তে পাওয়া জমি ছিল। ওই জমিটি নন্তু দাস এলাকারই শেখ বাবুল নামে এক ব্যক্তিকে বিক্রি করে দেয়। ওই ব্যক্তি ওই সরকারি জমিতে অবৈধ ভাবে নির্মাণ কাজ শুরু করে। এরপরই সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তারপরই নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। ভূমি সংস্কার দপ্তরের আধিকারিকরা তদন্তে নামে। তদন্তের ফলস্বরূপ বুধবার নন্তু দাস ও শেখ বাবুল নামে দুই ব্যক্তির বিরুদ্ধে সরকারি জমি নষ্ট করার মামলা রুজু করে পুলিশ। সেই সঙ্গে গ্রেপ্তার করে ওই বিজেপি কর্মী নন্তু দাসকে। সরকারি জমিতে অবৈধ নির্মাণ ভেঙে ফেলা হয়। অন্যদিকে পলাতক রয়েছে আরেক অভিযুক্ত শেখ বাবুল। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে বলে জানিয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ এইভাবে সরকারি জমিতে অবৈধ নির্মাণের পেছনে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিকের পরোক্ষ মদত রয়েছে। উনার মদতেই এই ভাবে এলাকায় একের পর এক দুর্নীতি হয়ে চলেছে। এমনকি এলাকাতে বিভিন্ন জায়গায় ব্যাপক হারে মাটি কাটা হচ্ছে। সেই সমস্ত দিকেও সরকারি রয়েলটি ফাঁকি দিয়ে বেশি করে মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে দিনের আলোতে। আর এই সব কিছুর পেছনে হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিকের যোগসাজশ রয়েছে বলে দাবি এলাকার বাসিন্দাদের। ভূমি সংস্কার দপ্তর আধিকারিকের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হলে কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বড় বড় সাপ বেরিয়ে আসবে দাবি স্থানীয়দের। পাশাপাশি ভূমি সংস্কার দফতর আধিকারিকের বিরুদ্ধে তদন্তের দাবি জানিয়েছেন এলাকার বাসিন্দারা। হরিশ্চন্দ্রপুর আইটিআই কলেজের পাশে এই ভাবে সরকারি খাস জমি দখল করে নিয়ে অবৈধ নির্মাণ দিনের বেলায় চলছিল। বাসিন্দারা প্রকাশ্যেই দাবি করেছেন সমস্ত কাজই ভূমি সংস্কার আধিকারিকদের ছত্র-ছায়ায় সম্পন্ন হচ্ছে। সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশ হবার আগে কেন ব্যবস্থা নেওয়ার কোন ইচ্ছা দেখা যায়নি এই প্রশ্ন তুলেছেন এলাকার বাসিন্দারা। এদিকে সরকারি জমিতে অবৈধ নির্মাণের ঘটনায় বিজেপি কর্মী গ্রেফতার হওয়ায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকায়। এ প্রসঙ্গে এলাকার তৃণমূল নেতৃত্ব প্রশাসনকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। যদিও এ ব্যাপারে এলাকার বিজেপি নেতারা দাবি করেছেন গ্রেপ্তার হওয়া ওই ব্যক্তি বিজেপি কর্মী নন। তা ছাড়া পুলিশ কেন ওই জমিতে অবৈধ নির্মাণকারী গ্রেপ্তার করছে না। বিজেপির দাবি সমস্ত ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া উচিত। অন্যদিকে সংবাদ মাধ্যমে খবর হওয়ার পরই হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লক ভূমি সংস্কার আধিকারিক ফখরুদ্দিন আহমেদ নিজে গিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে তিনি এড়িয়ে যান। ক্যামেরার সামনে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি।