উত্তরবঙ্গ নিউজ : মালদা : ২৪ শে ফেব্রুয়ারী ২০২২ : বৃহস্পতিবার : যে রাজ্যে উন্নয়ন নিয়ে এতটা ঢাক ঢোল সেই রাজ্যে বিশুদ্ধ পানীয় জল থেকে বঞ্চিত ইংরেজবাজার পৌরসভার বাসিন্দারা। ১৯ বছরের দেড়শ কোটি টাকা খরচ হয়েছে ঘরে ঘরে পরিশুদ্ধ আর্সেনিকমুক্ত পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার জন্য। কেন্দ্র, রাজ্যের কোষাগার থেকে খরচ হয়েছে দেড়শ কোটি টাকা। কিন্তু তারপরেও জল ঘরে ঘরে আসেনি। পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে পানীয় জলের প্লান্ট, নেই কর্মীও। আসন্ন পৌরসভা নির্বাচন। শাসকদলের প্রতিশ্রুতি দেওয়ার পরেও আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল ঘরে ঘরে এখনো এসে পৌঁছালো না। ভোটের আগে এই প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে শহরবাসীর মধ্যে। যদিও শাসক দলের নেতারা বলছেন খুব শীঘ্রই এই প্রকল্পের ট্রায়াল শুরু হয়ে যাবে।
মালদা ইংরেজবাজার পৌরসভার বাসিন্দাদের বাড়ি বাড়ি আর্সেনিক যুক্ত পানীয় জল পৌঁছে দিতে প্রায় এক দশক আগে জহরলাল নেহেরু আরবান রুরাল মিশন প্রকল্পে মহানন্দা নদী থেকে জল তুলে ট্রিটমেন্ট করে সেই জল সরবরাহ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। পুরসভা সূত্রে জানা যায় ২০০৩ সালে প্রকল্প হাতে নেয় বাম সরকার। মহানন্দা থেকে ঘরে ঘরে আর্সেনিক মুক্ত জল পাঠানোর প্রকল্প। শুরুতেই ৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ কেন্দ্রের। রাজ্য কেন্দ্র মিলিয়ে ১০৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা খরচ। এরপরে ৪৮ কোটি টাকা বরাদ্দ করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পাইপ বসানোর কাজ শুরু হলেও অধরা বিশুদ্ধ পানীয় জল। অন্যদিকে মালদার দুই পৌরসভার ইংরেজবাজার ও পুরাতন মালদাই এখনো তৈরি হয়নি ডাম্পিং গ্রাউন্ড। ইংরেজবাজার কেজি সান্যাল রোড, স্টেশনরোড, রথবাড়ি এলাকায় ও পুরাতন মালদা মঙ্গলবাড়ী, বুলবুলিমোড়ে স্তুপ আকৃতি হয়ে রয়েছে এই জঞ্জাল। শহরবাসীরা দুর্গন্ধে রাস্তায় দিয়ে চলাচল করতে নাভিশ্বাস হতে হচ্ছে। জঞ্জাল সমস্যা নিয়ে খুব ভালো ভাবেই ওয়াকিবহাল বর্তমান পুরো প্রশাসকরা। পুরসভার সূত্রে জানা যায় এখানকার ডাম্পিং গ্রাউন্ড করার কথা ছিল কেন্দ্রীয় সরকারের। ভারত-বাংলাদেশ মহদীপুর সীমান্ত দেখা হয়েছে কিন্তু নানা জটিলতার কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। জেলা সিপিআইএমের সম্পাদক ওমর মৈত্র জানান, দেড়শ কোটি টাকা বরাদ্দ কোথায় গেল জবাব দিতে হবে এই পৌরসভাকে। দেড়শ কোটি টাকা খরচ হওয়ার পরেও এই শহরের মানুষ আর্সেনিক যুক্ত পানীয় জল আজও বাড়িতে পেলো না। ১৯ বছর ধরে এই প্রকল্পে এই পরিকল্পনা রাস্তাঘাট কেটে ফেলা পাইপলাইন পোতা করে দেড়শ কোটি টাকা খরচ করে এই শহরের আজও মানুষের বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছালো না। এই জবাবটা দিতে হবে এই পৌরবোর্ডকে। আর ভাগাড় তৈরি করার ক্ষেত্রে এই পৌরসভা ব্যর্থ। ১৪ থেকে ১৫ টা জায়গাও দেখে ফেললেও ভাগাড় তৈরি হলো না। আর এই যে বর্জপদার্থের জন্য যে টাকা বরাদ্দ হয়েছে সেটা সৎবাবহার করতে পারেনি। এ বিষয়ে বিজেপি নেতা তথা বিদায়ী কাউন্সিলর অম্লান ভাদুরি জানান, পৌর নাগরিকদের বাড়ি বাড়িতে আর্সেনিক মুক্ত পানীয় জল পৌঁছে দিতে এই পৌরসভা পুরোপুরি ভাবে ব্যর্থ। টাকা বরাদ্দ হলেও সেই টাকা লুটপাট করা হয়েছে। পাশাপাশি ভাগাড়ের নামে জায়গা খোঁজার নাম করে ভাগাড়ের অর্থ বরাদ্দ হওয়া টাকাগুলি নষ্ট করছে শাসক দল এর নেতারা। মালদা জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি কালী সাধন রায় জানান পরিশোধিত পানীয় জল পৌর নাগরিকদের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে এই পৌরসভা পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ । মানুষ কে এখনো ফ্যাক্টরির জল কিনে খেতে হচ্ছে। এ বিষয়ে ইংরেজবাজার পৌরসভার বিদায়ী চেয়ারম্যান তথা শহর তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি নরেন্দ্রনাথ তেওয়ারি জানান, বিরোধীরা বিরোধ করার জন্যই এই সমস্ত কথা বলছেন। কারণ তাদের হাতে কোনো কর্মসূচি নেই। এই রাজ্যে যে উন্নয়ন হয়েছে তা তৃণমূল কংগ্রেস আমলে হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন আমাদের নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তারপর থেকেই রাজ্যের উন্নয়ন হয়েছে। আমরা ইংরেজবাজার পৌরসভার আমাদের জলের লাইনের কাজ ৯৯.৯ শতাংশ করে নিয়েছি। নির্বাচন ঘোষণা হওয়ার পর বাকি ১ শতাংশ কাজটি আমরা করতে পারেনি তবে নির্বাচনের পর ১৫ দিনের মধ্যেই আমরা আর্সেনিক যুক্ত পানীয় জল প্রতিটি ঘরে ঘরে পৌর নাগরিকদের ঘরে ঘরে পৌঁছাব। পাশাপাশি ভাগাড় জঞ্জাল নিয়ে আমাদের অনেক সমস্যা ছিল তবে আমরা জায়গা কিনে ছিলাম কিন্তু সেখানে সেই জায়গাতে বিএসএফ এর পক্ষ থেকে একটু বাধা সৃষ্টি হয় করেছে। পরবর্তীতে আমাদের জেলা শাসক এবং আমাদের চেয়ারপারসন সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সমস্যাটাও আমাদের খুব শীঘ্রই সমাধান হয়ে যাবে।