উত্তরবঙ্গ নিউজ : মালদা : ২৪ শে ফেব্রুয়ারী ২০২২ : বৃহস্পতিবার : উন্নয়নের রাজ্যে মন খারাপ মালদহের চাঁচল ১ নম্বর ব্লকের খরবা গ্রাম পঞ্চায়েতের ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দাদের। তাঁদের কয়েক দশকের দাবী আজও পূরণ হয়নি। স্বাধীনতার পর থেকে প্রতি ভোটেই তাঁরা মহানন্দা নদীর উপর সেতুর দাবী জানিয়েছেন। রাজনৈতিক নেতারা ভোটের সময় গ্রামে এসে দ্রুত ব্রিজ তৈরির আশ্বাসও দিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু ভোট মিটলে প্রতিশ্রুতির বাজনাও মিলিয়ে গিয়েছে। তাই আজও বছরের ছ’মাস বাঁশের সাঁকো আর বাকি ছ’মাস নৌকায় ভরসা করে মালদা জেলার মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে হয় ভবানীপুরের মানুষকে। গ্রামবাসীদের সমস্যার কথা জানেন জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ এবং এলাকার বিধায়ক। তাঁরা ফের আশ্বাস দিয়েছেন, মহানন্দায় ব্রিজ নির্মাণে তাঁরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবেন। ভবানীপুর গ্রামের প্রায় তিনদিক ঘিরে রেখেছে মহানন্দা। বাকি অংশ সুই নদীতে ঘেরা। সুই নদী পেরোলে উত্তর দিনাজপুরের ইটাহার ব্লক, মহানন্দা পেরোলে মালদার চাঁচল ১ নম্বর ব্লক। প্রশাসনিক যে কোনও কাজে গ্রামের মানুষকে মহানন্দা পেরিয়েই মালদার ভূখণ্ডে আসতে হয়। তবে বেশ কিছু প্রয়োজনে তাঁরা সাঁকো পেরিয়ে ইটাহারেও যাতায়াত করেন। গ্রামের জনসংখ্যা প্রায় তিন হাজার। শীত কিংবা শুখা মরশুমে মহানন্দা পেরোতে তৈরি থাকে বাঁশের নড়বড়ে সাঁকো। আর বর্ষায় নদীর জল বাড়লে নৌকা ছাড়া নদী পেরোনোর কোনও উপায় নেই। গ্রামবাসীদের সব চেয়ে সমস্যা কোনও রোগী কিংবা প্রসূতিকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া। বাঁশের মাচায় রোগীকে শুইয়ে হাসপাতাল নিয়ে যেতে হয়। ছেলে-মেয়েদের স্কুল-কলেজে যাতায়াতও বর্ষায় বিপন্ন হয়ে পড়ে। তাই মহানন্দায় পাকা সেতুর দাবী উঠেছে অনেক আগে থেকেই।
ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান জানায়, তাঁদের গ্রামে ৬০০ ঘর মানুষের বাস। গ্রামবাসীদের সবাইকে মহানন্দা পেরোতে এই বাঁশের সাঁকোর উপরেই নির্ভর করতে হয়। তাতেও সব সময় শঙ্কা থাকে। যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এই সাঁকোয় একাধিকবার দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেশ কয়েকবার মাচা থেকে মোটরবাইক নদীতে পড়ে গিয়েছে। বর্ষার সময় তাঁদের সমস্যার শেষ নেই। সেই সময় বিপদ আসলে মাঝিরা নৌকা নিয়ে সময় মতো নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে পারেন না। এর জন্য গ্রামের বেশ কয়েকজন রোগী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা গিয়েছেন। ভোট নেওয়ার সময় গ্রামে সব দলের নেতারা আসেন। তাঁদের কাছে গ্রামবাসীরা প্রতিবারই পাকা সেতুর দাবী জানিয়েছেন। এলাকার বিধায়ক, এমনকি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছেও সেই দাবী জানানো হয়েছে। যদিও রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের কাছে সেই দাবী পৌঁছেছে কিনা কেউ জানে না। তাঁরা শুধু জানেন, এখনও গ্রামে যাতায়াতের জন্য মহানন্দার উপর সেতু তৈরি হয়নি। যা তাঁদের কাছে খুব প্রয়োজন।
মিজানুর সাহেবের বক্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন কামালুদ্দিন শেখ, ইশানুর হক, মহম্মদ গনিরাও। নদীর অন্য পাড়ে থাকা গনি সাহেব জানাচ্ছেন, তাঁরা নদীর এপাড়ের বাসিন্দা হলেও এলাকার কৃষকরা নদী পেরিয়ে ওপারে ভবানীপুর গ্রামেই যান। কারণ, সেই গ্রামে যেমন উর্বর কৃষিজমি রয়েছে, তেমনই গবাদি পশুর জন্য সতেজ ঘাস ভবানীপুরেই পাওয়া যায়। গোরু-বাছুরকেও সাঁকো পার করে ওপারে নিয়ে যেতে হয়। এখন নদীতে অল্প জল আছে বলে সমস্যা তেমন হচ্ছে না। কিন্তু জল বাড়লে নৌকা ছাড়া ভবানীপুরে যাওয়া ছাড়া উপায় নেই। ওই গ্রামের মানুষ রেশন নিতেও এপারে আসেন। যে কোনও প্রশাসনিক কাজে তাঁদের এপারে আসতে হয়। আর বর্ষায় যদি সেখানে কেউ অসুস্থ হয়, তবে তাঁকে ডালাতে করে হাসপাতাল নিয়ে আসা ছাড়া উপায় নেই। তবে শুধু এই অস্থায়ী সাঁকোই নয়, ভবানীপুর গ্রামের আরও একটি বড় সমস্যা নদীর ভাঙন। প্রতি বছর নদীর পাড় কাটছে। ফলে গ্রামবাসীদের বিপদ আরও বাড়ছে। যদিও এই মুহূর্তে ওই গ্রামের বাসিন্দাদের সব চেয়ে বেশি প্রয়োজন, মহানন্দার উপর একটি পাকা সেতু।
এপ্রসঙ্গে মালদা জেলা পরিষদের কৃষি কর্মাধ্যক্ষ এটিএম রফিকুল হোসেন জানান, বিষয়টি তাঁর জানা আছে। মহানন্দার উপর পাকা সেতু না থাকায় ভবানীপুর গ্রামের বাসিন্দারা সত্যিই সমস্যার মধ্যে রয়েছেন। বিশেষত বর্ষার সময় তাঁদের সমস্যা চরমে ওঠে। নদীতে পাকা সেতু নির্মাণের জন্য এর আগে তাঁরা রাজ্য সরকারের কাছে দরবার করেছিলেন। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা ফের মুখ্যমন্ত্রীর স্নেহধন্যা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিনের দ্বারস্থ হবেন। অন্যদিকে চাঁচলের বিধায়ক নীহাররঞ্জন ঘোষ জানিয়েছেন, ওই গ্রামের মানুষ এর আগেও তাঁকে এই সেতু তৈরির জন্য আবেদন জানিয়েছেন। তিনি এনিয়ে সেচ দফতরের সঙ্গে কথাও বলেছেন। ব্রিজের জন্য তিনি আবারও সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলবেন। ওই গ্রামের মানুষের জন্য তিনি যদি মহানন্দার উপর পাকা সেতু তৈরি করে দিতে পারেন, তবে তাঁরও খুব ভালো লাগবে।