19.2 C
New York
Wednesday, June 18, 2025

Buy now

spot_img

এক ব্যতিক্রমী বিয়ের সাক্ষী থাকল ধূপগুড়ির গোসাইরহাট রাভাবস্তী।

উত্তরবঙ্গ নিউজ : জলপাইগুড়ি : ধুপগুড়ি : ১৬ ই মার্চ ২০২২ : বুধবার : কোনো মেয়েকে ছোটো থেকে বড় করে তারপর বধূ বেশে শ্বশুরবাড়িতে পাঠানোর বেদনা কন্যাদান করা সব বাবা মা-ই ভালো বলতে পারবেন। কিন্তু যদি ঠিক এর উল্টোটা হয়, পাত্রকে পরিবারের সমস্ত মায়া ত্যাগ করে শ্বশুরবাড়িতে যেতে হবে আর সেখানেই ঘর জামাই হিসেবে থাকতে হবে। আর বিয়ের দিন মেয়ের বাড়ির লোকজন এসে রীতিমত পাত্রকে নিয়ে যাবে। ব্যাপারটা কেমন হয় তাই না! তবে ভারতের কিছু কিছু জায়গায় এই রীতির চল এখনও আছে। ধূপগুড়ি ব্লকের রাভাবস্তিতে এই রীতির প্রচলন আছে। সেখানে বিয়ের পর মেয়েরা শ্বশুরবাড়িতে যায় না, উল্টে ছেলেরাই শ্বশুরবাড়িতে পাড়ি দেয়। জানা গেছে, অন্যান্য সমাজ ব্যবস্থায় পিতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা থাকলেও রাভা জনজাতির মাতৃতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থা। এখানে মায়েরাই সর্বেসর্বা। মায়ের নামেই সন্তানের বংশপরিচয় হয়ে থাকে। পাশাপাশি বাড়ির মায়েদের এবং মেয়েদের নামেই হয় সমস্ত সম্পত্তি। যুগ যুগ ধরে রাভাদের মধ্যে এই রীতির প্রচলন হয়ে আসছে। এই নিয়ে রাভা ডেভলমেন্ট কাউন্সিলের জেনারেল সেক্রেটারি রবি রাভা বলেন, অন্যান্য সমাজ ব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক হলেও, আমাদের সমাজ ব্যবস্থা মাতৃতান্ত্রিক। বিয়ের পর বরকে শ্বশুরবাড়িতে পাড়ি দিতে হয়, এটাই আমাদের রীতি। তবে বর্তমানে এই রীতিতে খানিকটা বদল এসেছে। বিয়ের দিন শ্বশুরবাড়ি যেতে হলেও, শ্বশুরবাড়িতে থাকাটা বর্তমানে বাধ্যতামূলক নয়।

জানা গেছে, ধূপগুড়ির রাভাবস্তির বেশিরভাগ পুরুষই বিভিন্ন এলাকা থেকে বিয়ে করে এসে এখানেই থেকে গেছেন। তবে এ সমস্ত রীতিনীতি থাকলেও এক ব্যতিক্রমী বিয়ের সাক্ষী থাকল ধূপগুড়ির গোসাইরহাট রাভাবস্তী। আমাদের কাছে সাধারণ বিয়ে মনে হলেও এই প্রথম রাভাবস্তিতে বিয়ের দিন কোনো ছেলেকে শ্বশুরবাড়ি যেতে হল না। উল্টে বিয়ে করে ঘরে মেয়ে নিয়ে আসল। আর ঘরে মেয়ে নিয়ে আসার দৃশ্য দেখে আনন্দে চোখের জল ফেললেন রাভা বস্তির মহিলারা। জানা গেছে, গোসাইরহাট এলাকার যুবক কুমার রাভার সাথে আলিপুরদুয়ারের কুমারগ্রাম এলাকার অনিতা বর্মনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর উভয় পরিবারের মধ্যে আলোচনা করে বিয়ের দিন ঠিক হয়। কিন্তু মেয়েটি হিন্দু হলেও কুমার রাভা খ্রীষ্টান। তাই রাভা রীতি অনুযায়ী মেয়েটি কয়েকদিন আগেই কুমার রাভার আত্মীয়ের বাড়িতে আসে এবং খ্রীষ্টান ধর্মে দীক্ষিত হয়, তার নতুন নাম হয় অনিতা রাভা।

মঙ্গলবার রাভারীতি পালন করে পাশের গোসাইরহাট চার্চে গিয়ে বিয়ে করেন তারা। সেখানকার ফাদার তাদের দুজনকে সারাজীবন একে অপরের সাথে পথ চলার সংকল্প করান। এর পরেই নতুন বউকে বাড়িতে নিয়ে আসেন কুমার রাভা। আর নতুন বউকে বাড়িতে নিয়ে আসায় কুমার রাভার মা চোখের জল ফেলতে ফেলতে বলেন, ভেবেছিলাম ছেলেকে শ্বশুরবাড়ি পাঠাতে হবে। কিন্তু ছেলেই বউ নিয়ে বাড়িতে আসল, খুব ভালো লাগছে। সাধারণত আমাদের গ্রোত্রের সকল পুরুষই বিয়ের দিন শ্বশুরবাড়িতে চলে যায়। এদিন এই বিয়েতে আমন্ত্রিত ছিল রাভা বস্তির সকলেই। রীতিমত সকলেই রাভা ঐতিহ্যবাহী পোশাক পড়েছিলেন। বাড়িতে খাওয়ার এলাহি আয়োজন ছিল। জানা গেছে, রাভা জনজাতির বিয়ে সাধারণত দিনেবেলাতেই হয়ে থাকে। পাত্রের বাবা অমিত রাভা বলেন, ঘরের ছেলে ঘরেই থাকছে আর যে মেয়েটা ঘরে এসেছে তাকেও মেয়ের মতো দেখব। এই বিষয়ে পাত্র-পাত্রী কুমার রাভা এবং অনিতা রাভার কথায়, আমরা একত্রে পথ চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটাই বড় কথা। আমরা কখনও রাভা বা রাজবংশী হিসেবে প্রেমপ্রীতি করিনি। আমরা পরস্পরের হৃদয় দেখেই সম্পর্কে জড়িয়েছি। প্রসঙ্গত, ধূপগুড়ির রাভাবস্তিতে গোসাইরহাট এলাকায় ৮৩ জন রাভা এবং খুকলুং বস্তি এলাকায় ১১০ জন রাভা রয়েছে। এক সময় তাদের জীবনযাপন অরণ্যনির্ভর থাকলেও বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়ায় তারা কৃষিকাজ শিখেছে।

সম্পর্কিত খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

22,878FansLike
3,912FollowersFollow
14,700SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সাম্প্রতিক খবর

error: Content is protected !!