উত্তরবঙ্গ নিউজ : জলপাইগুড়ি : মালবাজার : ৮ ই এপ্রিল ২০২২ : শুক্রবার : বেআইনি ভাবে এলাকার বিদ্যালয় সংলগ্ন বাগান থেকে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে আড়াইশো গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ উঠলো। বনদপ্তরের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন বন ও ভূমি কর্মাধক্ষ্য, ক্ষুব্ধ পরিবেশ সচেতন মানুষেরা, খতিয়ে দেখে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস বিডিও-র।
বাগান থেকে এক সঙ্গে প্রায় আড়াইশো গাছ কেটে নেওয়ার অভিযোগ। অভিযোগ অবৈধ ভাবে কেটে নেওয়া হয়েছে ওই গাছ গুলো। গাছ কাটার অভিযোগ এলাকারই একজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। ক্ষুব্ধ পরিবেশ সচেতন মানুষেরা। বন-দপ্তরের প্রতি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন বন ও ভূমি কর্মাধক্ষ্য। সমগ্র ঘটনা খতিয়ে দেখার আশ্বাস বিডিওর। এখন বলা হয় “একটি গাছ একটি প্রাণ একটি গাছ হাজার প্রাণ”। দিন দিন বাড়ছে পরিবেশ দূষণ, বাড়ছে বিশ্ব উষ্ণায়ন। করোনা কালে অক্সিজেনের অভাব বোধ করেছে বহু মানুষ। এই অবস্থায় বার বার গাছ লাগানোর কথা বলছে পরিবেশবিদরা। সেখানে এক সাথে কি ভাবে আড়াইশো গাছ কেটে নেওয়া হল উঠছে প্রশ্ন? ঘটনাটি ঘটেছে মালদা জেলার হরিশচন্দ্রপুর এলাকার কিরণবালা বালিকা বিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী একটি বাগানে। যেটা ছোটখাটো একটি বন বলা চলে। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের প্রচুর গাছ। আর সেখান থেকে অবৈধ ভাবে গাছ কাটার অভিযোগ উঠছে এলাকার ব্যবসায়ী বিবেক কেডিয়ার বিরুদ্ধে। অভিযোগ বনদপ্তরের কর্তার অনুমতি নিয়ে তিনি গাছ কেটেছেন। কিন্তু বনদপ্তর থেকে কি ভাবে এতগুলি গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া হল তা নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। প্রশাসন থেকে স্পষ্ট বলা হচ্ছে আইনি ভাবে পাঁচটির বেশি গাছ কাটার অনুমতি দেওয়া যায় না। তাও সঠিক নিয়ম মেনে করতে হয়। স্বাভাবিক ভাবে এই নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে এলাকাবাসী। বনদপ্তরের কর্তাকে এক হাত নিয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বন ও ভূমি কর্মাধক্ষ্য আদিত্য মিশ্র। যদিও বনদপ্তর সূত্রে বলা হয়েছে আইন মেনে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল এবং বনদপ্তরের পক্ষ থেকে সমস্ত ঘটনাটি তদারকি করা হয়েছে। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু বলেছেন, এই ভাবে এতগুলি গাছ কাটা যায় না। প্রশাসন ব্যাপারটি খতিয়ে দেখবে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এলাকাবাসী পরিবেশ প্রেমী দেবব্রত পাল বলেন, কি ভাবে এতগুলো কাজ কেটে নেওয়া হলো। কারা এই গাছ কাটার অনুমতি দিল। যেভাবে গাছগুলো কেটে নেওয়া হয়েছে দেখে চোখে জল আসছে। করোনা কালে মানুষ অক্সিজেনের অভাবে ভুগেছে। এই যে গাছ কাটছে তার কুফল ভুগতে দেওয়া এলাকাবাসীকে। তাহলে সরকারের পক্ষ থেকে কি দরকার গাছ লাগানো নিয়ে এত ক্যাম্পেইন করার। আমরা চাই এর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বন ও ভূমি কর্মাধক্ষ্য আদিত্য মিশ্র বলেন, ব্যাপারটি বৈধ না অবৈধ আমি তো বলতে পারব না, ঘটনাটি এখন শুনলাম। বনদপ্তর আধিকারিককে ফোন করেছিলাম উনি বলেছেন যে ৭৫ টি গাছ কাটার অনুমতি দিয়েছেন। এর আগেও এই ভাবে ফলদায়ক কাজ কাটা হয়েছে। কিন্তু আমি জানি নিয়ম মেনে পাঁচটির বেশি গাছ কাটা যায় না। এই নিয়ে আমি জেলা বনদপ্তরকে জানাবো। ডিএম সাহেবকে লিখিত ভাবে অভিযোগ জানাবো। কারণ পরিবেশের ক্ষতি মেনে নেওয়া যায় না। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের বিডিও অনির্বাণ বসু বলেন, এই ভাবে তো গাছ কাটা যায় না। পাঁচটির বেশি গাছ কাটা যায় না আইন অনুযায়ী। একটি গাছ কাটলে পাঁচটি গাছ লাগাতে হয়। তাও গাছ কাটা হয় সরকারি কোনো কাজের প্রয়োজন পড়লে জনস্বার্থে। তাও একসাথে এতগুলো গাছ। আমি সমস্ত ব্যাপারটা খতিয়ে দেখব। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
যদিও ব্যবসায়ী বিবেক কেডিয়ার সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে চাননি। প্রশাসনের উচিত দ্রুত এই ব্যাপারে নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত করা। কারণ বর্তমান পৃথিবীতে গাছের প্রয়োজনীয়তা কতটা তা যত দিন যাচ্ছে আমরা বুঝতে পারছি। প্রযুক্তিগত উন্নয়নের কারণে আমরা হয়তো যথেচ্ছ ভাবে গাছ কেটে ফেলছি কিন্তু পরিবেশ গত ভাবে তার যা বাজে প্রভাব পড়ছে তার জন্য আমাদের নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। আর এখানে একটি এলাকায় এই ভাবে, আড়াইশোটি গাছ কেটে নেওয়া মানে এলাকার যে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হবে তা বলাই বাহুল্য। তাই কাদের নির্দেশে ওই ব্যবসায়ী এই কাজ করল। সমগ্র ব্যাপার খতিয়ে দেখা উচিত প্রশাসনের। আর এই গাছ কাটার ফলে যা ক্ষতি হয়েছে সেই জায়গায় নতুন গাছ লাগিয়ে তা পূরণ করার চেষ্টা করা উচিত।