উত্তরবঙ্গ নিউজ : জলপাইগুড়ি : মালবাজার : ৯ ই এপ্রিল ২০২২ : শনিবার : চা-বাগানের রাস্তায় ছিড়ে পরেছে বিদ্দুৎ এর তার। আর সেই তারে বিদ্যুৎপৃষ্ঠ হয়ে মৃত্যু হল ১০ বছরের এক স্কুল ছাত্রীর। মালবাজার মহকুমার সাইলি চাবাগানের ঘটনা।
শনিবার সকাল সাড়ে আট টা নাগাদ ওই স্কুল ছাত্রী বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় দিয়ে স্কুলে যাচ্ছিলো। বাড়ি থেকে বের হয়ে ফ্যাক্টারী লাইন এ পৌছাতেই রাস্তার জমা জলে পা দিতেই বিদ্দুৎ পৃষ্ট হয়। কারন সেই সময় ওই জায়গায় বিদ্দুৎ এর তার ছিড়ে রাস্তার জমা জলের মধ্যে পড়ে ছিলো। সেই তার দেখতে না পেয়েই এই দুর্ঘটনা ঘটে। মৃত স্কুল ছাত্রীর নাম প্রিয়া টোপ্পো (১০), বাড়ি সাইলি চা-বাগানের চেল লাইনে। সাইলি চা-বাগানের বাজার লাইনের মনসা স্কুলে পড়ত সে। সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ এই দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও বিদ্দুৎ দপ্তরের কোন আধিকারিক বা কর্মী ঘটনা স্থলে না আসায়, মৃতদেহ আটকে বিক্ষোভ এলাকাবাসীরা। খবর পেয়ে ঘটনা স্থলে আসে রাঙ্গামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অশোক চিক বড়াইক, এলাকার তৃণমূল চা-শ্রমিক নেতা অর্জন ছেত্রী, সাইলি এলাকার তৃণমূল নেতা আগাষ্টুষ কেরকাট্টা, মাল পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার প্রসাদ। উনারা এসে উত্তেজিত চা শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করেন।
খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনা স্থলে আসে মালবাজার থানার বিশাল পুলিশ বাহিনী। মালবাজার পুলিশের এস.ডি.পি.ও. রবীন থাপা, আই.সি. সুজিত লামা। পুলিশ এসে গ্রামের মানুষদের বোঝায়, যাতে মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তে পাঠানো যায়। কিন্তু বিদ্যুৎদপ্তরের কর্মীরা ঘটনাস্থলে না আসায় বিক্ষোভ দেখাতে থাকে এলাকার মানুষ। এরপর স্থানিয় চা-শ্রমিকেরা ডামডিম থেকে লাভা যাবার বর্ডার অর্গানাইজেশন রোড আটকে বিক্ষোভ দেখায়। মৃতের বাবা রতন টোপ্পো বলেন, শনিবার সকালে স্কুলে যাবার জন্য মেয়ে বাড়ি থেকে বের হয়। এরপর কিছুক্ষন পর জানতে পারি আমার মেয়ে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়েছে। তড়িঘড়ি ঘটনা স্থলে এসে দেখে মেয়ে আর নেই। ঘটনাস্থলে বিদ্দুৎ তারে জড়িয়ে রাস্তার ওপর মৃত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। বিদ্যুৎদপ্তরের গাফিলতির জন্য এই দুর্ঘটনা ঘটেছে। রাস্তার ওপর বিদ্যুৎ এর তার ঠিকঠাক নেই। বহু পুরনো তার এখন রয়েছে। এলাকার বাসিন্দা, তথা প্রত্যক্ষদর্শী বিনয় বারা বলেন, আমার গ্রামের মেয়ে এটি। অর্থাৎ সাইলি সেল লাইনের বাসিন্দা। শনিবার আমি সাইকেল করে বাড়ি ফিরছিলাম। প্রায় ২০০ মিটার দূর থেকে দেখছি একটি স্কুল ছাত্রী হঠাৎ রাস্তার অপর পড়ে গেলো। আমি তড়িঘড়ি এসে মেয়েটিকে উঠাতে চেষ্টা করি কিন্তু দেখি বিদ্দুৎ এর তার মেয়েটির গায়ে লেগে আছে। লাঠি দিয়ে ছাড়ানোর চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা হয়নি। এরপর স্থানীয় মানুষেরা মেন লাইন লাইন বন্ধ করে দেয়। এরপর শ্রমিকেরা ঘটনা স্থলে ছুটে আসে। সকাল সাড়ে আট টায় এই দুর্ঘটনা ঘটে গেলেও বি্দ্যুৎদপ্তরের আধিকারিকেরা ১২ টা নাগাদ ঘটনা স্থলে আসে। আর এতেই এলাকার মানুষ আরও বেশি ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। রাঙ্গামাটি গ্রাম পঞ্চায়েতর প্রধান অশোক চিক বড়াইক বলেন, খুব দুঃখজনক ঘটনা। স্কুলে যাবার সময় বিদ্যুৎ এর তার ছিড়ে জলে পড়ে যায়। এরপর ওই জলে পা পড়তেই মৃত্যু হয় প্রিয়া টোপ্পোর মত এক ফুটফুটে মেয়ের। পরিবারটি যাতে উপযুক্ত ক্ষতিপুরণ পায়, তার চেষ্টা করছি। পাশাপাশি বিদ্যুৎ এর তার ঠিকঠাক করার চেষ্টা করছি। মালবাজার মহকুমা পুলিশের এস.ডি.পি.ও. রবীন থাপা বলেন, মৃতদেহ দুপুর ১২ টা নাগাদ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য জলপাইগুড়ি পাঠানো হয়েছে। মালবাজার পুলিশের উদ্যোগে মৃত দেহ ময়নাতদন্ত করে আবার বাড়িতে পৌছে দেওয়া হবে। পাশাপাশি এলাকায় বিদ্দুৎ এর তারগুলো ঠিক করতে বলা হয়েছে বিদ্যুৎদপ্তরকে।
মালবাজার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সুশীল কুমার প্রসাদ বলেন, প্রায় ৪ ঘন্টার বেশি সময় ধরে মৃতদেহ রাস্তায় পড়ে ছিলো। কারন গ্রামের মানুষের দাবী ছিলো যতক্ষন বিদ্যুৎদপ্তরের আধিকারিকেরা ঘটনা স্থলে আসছে না, ততক্ষন মৃতদেহ তুলতে দেওয়া হবে না। এরপর প্রায় ১২ টা নাগাদ বিদ্যুৎদপ্তরের আধিকারিকেরা ঘটনা স্থলে আসেন। এলাকার মানুষকে ক্ষতিপুরন এর আশ্বাস দেন। বিদ্যুৎ এর তার ঠিকঠাক করার আশ্বাস দেন এরপর দুপুর সাড়ে বারটা নাগাদ মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। মালবাজারের বিদ্যুৎদপ্তরের ডিভিশনাল ম্যানেজার নবীন কুমার এবং ওদলাবাড়ি স্টেশন ম্যানেজার কুশল সরকার বলেন, এই দুর্ঘটনা খুবই দুঃখের। আমাদের আসতে একটু দেরি হয়েছে ঠিকই, সেই জন্য এলাকার মানুষের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। আমরা এসে দেখলাম ২২০ ভোল্টেজের একটি তার ছিড়ে রাস্তার ওপর পড়ে রয়েছে। আমরা সব ঠিকঠাক করে দিচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের ওই এলাকায় সেফটি ডিভাইসও লাগানো ছিলো। পরিবারটি যাতে দ্রুত ক্ষতিপূরণ পায়, সে ব্যাপারে উর্ধতন কতৃপক্ষকে সব জানিয়েছি।