উত্তরবঙ্গ নিউজ : ঝাড়খণ্ড-মালদা : ১৩ ই এপ্রিল ২০২২ : বুধবার : মনে করা হচ্ছে প্রযুক্তিগত সমস্যা থেকে দুর্ঘটনা। আপাতত তিন জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে। উপস্থিত ছিলেন এই রাজ্যেরও বেশ কয়েকজন পর্যটক। যারা শারীরিক ভাবে তেমন অসুস্থ না হলে মানসিক ভাবে আতঙ্কিত। কারণ খাবার এবং জল ছাড়া প্রায় ২৪ ঘণ্টা আটকে থাকতে হয়েছিল রোপওয়েতে। পানীয় জল না মেলায় তৃষ্ণা নিবারণের জন্য নিজেদের প্রস্রাব সংরক্ষণ করে রেখেছিল বোতলে। যে ঘটনা শুনলে রীতিমতো গায়ে কাটা দিয়ে উঠছে। ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের কাছে বাবা বৈদ্যনাথ ধাম থেকে মাত্র কুড়ি কিলোমিটার দূরে ত্রিকুট পাহাড়ে ভারতের উচ্চতম ভার্টিক্যাল রোপওয়ে তে ঘটে গেল ভয়াবহ দুর্ঘটনা। গত রবিবার বিকেল চারটের সময় এই দুর্ঘটনা ঘটে। শূন্যের ঝুলন্ত অবস্থায় মুখোমুখি দুটি রোপওয়ে কেবিনের ধাক্কা লাগাতেই দুর্ঘটনার ঘটে বলে জানান স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা। এই ঘটনার জেরে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর। এই দুর্ঘটনার জেরে বারোটি কেবিন রোপওয়ের উপরে আটকে যায়। প্রায় ২২ জন দর্শনার্থী ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় ওই রোপওয়েগুলির মধ্যে আটকে ছিল। দুর্ঘটনার কাজে উদ্ধারের জন্য সোমবার দিন সকাল থেকে নামানো হয় ইন্ডিয়ান আর্মি, আইটিবিপি, ইন্ডিয়ান এয়ার ফোর্স এর জাওয়ানদের। বিকেল চারটার সময় শূন্যে ঝুলন্ত দুটি কেবল কার এর মধ্যে সংঘর্ষের জেরে ১২ জন গুরুতর আহত হয়। এর মধ্যে একজন ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয়েছে সরকারি সূত্রের খবর।
এদিকে এ ঘটনায় গুরুতর আহত হয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন হরিশ্চন্দ্রপুরের আট বাসিন্দা। এদের বাড়ি মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের বাজার পাড়াতে। তাদের নাম দেবানজয় পাল, ঝুমা পাল, বিনয় দাস, নমিতা দাস, সুধীর কুমার দত্ত, সাহেব দাস, পুতুল শর্মা আরও এক জন ভালুকা বাজারের বাসিন্দা বলে জানা যায়। গত শনিবার সকালে হরিশ্চন্দ্রপুরের ভালুকা বাজার থেকে একটি বাস দেওঘর এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়। এই বাসে হরিশ্চন্দ্রপুর থানা এলাকার বিভিন্ন অঞ্চলের বাসিন্দা ছিলেন। এমনকি মালাহার, সামসি, রতুয়া বাহারাল, মানিকচক, কালিয়াচকের বাসিন্দারাও ছিল বলে জানা গেছে। ওই বাসে থাকা যাত্রী জানান আমরা গত শনিবার জেলার প্রায় ৫০ জন পুণ্যার্থী কে নিয়ে দেওঘর এর উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম। ইচ্ছে ছিল দেওঘর বাবা বৈদ্যনাথ ধাম এ পুজো দিয়ে ত্রিকুট পাহাড় বেড়াতে যাওয়ার। সেই পরিকল্পনা করে আমরা গত রবিবার দুপুরে ত্রিকুট পাহাড় এসেছিলাম। সেখানে পাহাড়ে ওঠার জন্য ক্যাবলকারে চড়ার জন্য টিকিট কেটেছিলেন আমাদেরই কয়েকজন বাসের সহযাত্রীরা। তাদের মধ্যে চারজন ওই ক্যাবলকারে জায়গা পেয়ে যান। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুর্ঘটনাগ্রস্ত হয় কেবল কারগুলো। আমাদের আট জন দীর্ঘক্ষণ ওই ক্যাবলকারে আটকে থাকেন উপরে।
প্রায় ২৪ ঘন্টা উপরে থাকার পর সেনা বাহিনীর প্রচেষ্টায় উদ্ধার করে ওদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ওদের আঘাত গুরুতর না হল মানসিকভাবে ভীষণ আতঙ্কিত। উদ্ধারকাজে সেনাবাহিনীর দুটি হেলিকপ্টার নামানো হয়েছে। এমনকি ঝাড়খন্ড প্রশাসন ড্রোনের মাধ্যমে উপরে আটকে থাকা কেবল করের মধ্যে যাত্রীদের খাবার সরবরাহ করেছেন লাগাতার ২৪ ঘন্টা ধরে। এই রোপয়েতে করে দৈনন্দিন বহু পর্যটক যাতায়াত করে। তাই কি ভাবে এই দুর্ঘটনা ঘটলো? আগে থেকে কি সব কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা ছিল না এই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন। এই ঘটনা বেশ কয়েক বছর আগে দার্জিলিং এর ভয়াবহ দুর্ঘটনার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। তবে সৌভাগ্যবশত আমাদের রাজ্যের ৮ যাত্রী বেঁচে গেছে প্রাণে। তবে তাদের প্রায় ২৪ ঘন্টা ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। তা রীতিমতো হাড় হিম করা।