উত্তরবঙ্গ নিউজ : মালদা : ১৬ ই এপ্রিল ২০২২ : শনিবার : অবসর নিলো মমতা। বিগত ১০ বছর দেশের সুরাক্ষার দায়িত্ব পালন করার পর অবসর দেওয়া হল মমতা ও তার সঙ্গী গাইডকে। চালু হয়েছে তাদের পেনশনও। আর এই অবসরকালীন ভাতা পেয়ে দিব্যি দিন যাপন করছে তারা। তবে এই ‘মমতা’ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জী নন। তিনি হলেন মালদা রেঞ্জের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর ঘোড়া, নাম তার ‘মমতা’। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সঙ্গেই দেশ রক্ষার কাজ করেছে ‘মমতা’ ও ‘গাইড’।
মালদহের কালিয়াচক থানার অন্তর্গত ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের শ্মশানি বিএসএফ চৌকির ঘেরাটোপের মধ্যেই অস্থায়ী এক অশ্বশালা, রয়েছে পাকা পাঁচিল। সেখানেই অবসরপ্রাপ্ত দুই সীমান্ত প্রহরী ‘মমতা’ আর গাইড’ এর দিন কাটছে। সেই আস্তাবলে গিয়ে দেখা যায়, বিএসএফের একজন কর্মী প্রভীন সিং রাঠোর ওই দুই ঘোড়ার শরীরের পরিচর্যায় ব্যস্ত। হাত, পা থেকে সর্বশরীর মালিশ করে দিচ্ছেন রাজস্থানের যুবক প্রভীন। এখনও সুস্থ্য তারা। বিএসএফের সরকারি কর্মী ‘হর্স হ্যান্ডেলর’ প্রভীন সিং রাঠোর বলেন, “চাকরি জীবনে এরা খুব পরিশ্রম করত। এদের পিঠে সওয়ার হয়ে সশস্ত্র জওয়ানরা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে টহল দিতেন। তখন এদের একশো শতাংশ খাবার দেওয়া হত। এখন অবসরের পর ৭০ শতাংশ অবসরকালীন ভাতা পায় সার্ভিস রুলের নিয়মে। তাতেই জোঁটে খাবার। খাবারে দেওয়া হয় ছোলা, লবণ আর ভুসা। চরতে গিয়ে মিলছে সবুজ ঘাস। চাকরী রত অবস্থায় মিলত চিটাগুঁড়, ছোলার ছাতুও। দুই ঘোড়ার সার্ভিস বুকও রয়েছে। বেতন এবং পেনশন বাবদ সরকারের কত টাকা খরচ হচ্ছে সেই হিসাবও থাকছে। আগে এদের নিলামে বিক্রি করা হত। এখন সেই নিয়ম বন্ধ হয়েছে।
বিএসএফ সূত্রে খবর, মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার দূরে টেকনোপুরে রয়েছে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনীর বিশেষ ট্রেনিং অ্যাকাডেমি। সেখানে ঘোড়া, হাতি, কুকুরের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখান থেকেই ১৩ বছর আগে মমতাকে আনা হয়েছিল মালদহে। আর আনা হয় ১২ বছর আগে গাইডকে। এই দুইটি ঘোড়া দায়িত্বে থাকা সীমান্ত জাওয়ান প্রভীন সিং রাঠোর জানান বয়স হয়ে গেছে ঘোড়াগুলির। তাই এখন আর সীমান্তে টহলদারির কাজ করানো হয় না। সকালে ও বিকেলে শুধু ওয়াকিং করানো হয়। আর করানো হয় প্রতিদিন এক ঘন্টা মালিশ। গোলাপগঞ্জের পঞ্চায়েত সদস্য হারাধন রজক জানান এই ঘোড়াদুটি সীমান্ত এলাকায় দীর্ঘ ১০ বছর দেশের সেবা করেছে।
সীমান্তে যে সকল এলাকায় বিএসএফের গাড়ি প্রবেশ করতে পারে না। সেখানে এই দুই ঘোড়া অনায়সে প্রবেশ করে বিপদমুক্ত করেছে দেশকে। এই সেবার জন্য পুরস্কৃত করা উচিত এই অবসররত দুই সীমান্ত প্রহরীকে। বিএসএফ সূত্রে আরও জানা গেছে মমতা ও গাইডের অবসরের পর সীমান্তে টহলদারির জন্য বেশকিছু সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তাই নতুন করে দুইটি ঘোড়া সীমান্ত প্রহরীর কাজে নিয়োগের জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।