উত্তরবঙ্গ নিউজ : জলপাইগুড়ি : ময়নাগুড়ি : ২৬ শে এপ্রিল ২০২২ : মঙ্গলবার : নাবালিকা নির্যাতনের ঘটনায় সঠিক সময় অপরাধীদের গ্রেফতার করতে না পারা পুলিশ নির্যাতিতার বাড়ি যেতে আটকালো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের।
ফাঁকা বাড়িতে নাবালিকাকে ধর্ষণের চেষ্টা। তারপর খুনের হুমকি। সেই খুনের হুমকি সইতে না পেরে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করল নির্যাতিতা নাবালিকা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। এক মাস ধরে অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও সমস্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার না করে যে পুলিশ নির্যাতিতার আত্মহত্যার জন্য দায়ী যার শেষ পরিণতি নাবালিকার মৃত্যু সেই পুলিশই ময়নাগুড়ি ধর্ষণকাণ্ডে নির্যাতিতার বাড়ি যেতে আটকায় সামাজিক ন্যায় বিচার মঞ্চের প্রতিনিধি, সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেতৃবৃন্দ ও জাতীয় কংগ্রেস দলের নেতৃবৃন্দকে। এদিন ময়নাতদন্তের পর নির্যাতিতা নাবালিকার পরলৌকিক ক্রিয়াদির অনুষ্ঠান ছিল বাড়িতে সেই অনুষ্ঠান কার্য যাতে নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হতে পারে আর্থিক অনটনে থাকা পরিবারটি মেয়েটির চিকিৎসার জন্য গত প্রায় পনেরো দিন ধরে জলপাইগুড়ি হাসপাতাল উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে সর্বস্বান্ত হয়ে তাদের ঘরের মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে সেই পরিবারের পাশে অসহায় বাবার পাশে সাহস যোগাতে যাওয়া সামাজিক ন্যায় বিচার মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক সিপিআইএম পার্টির রাজ্য কমিটির সদস্য অলকেশ দাস সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদিকা রিনা সরকার, মহিলা নেত্রী ও প্রাক্তন জেলা পরিষদ সভাধিপতি দীপ্তি দত্ত, প্রাক্তন বিধায়ক মমতা রায়, এলাকার পার্টি নেতা সিপিআইএম জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য হরিহর রায় বাসুনিয়া, জেলা নেতা জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ আলাদা আলাদা দলে ভাগ হয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীটির বাড়ি যেতে গেলে বিভিন্ন জায়গায় পথ আটকায় পুলিশ। শেষ মেষ সিপিআইএম রাজ্য কমিটির সদস্য সামাজিক ন্যায় বিচার মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক অলকেশ দাস ওই সংগঠনের রাজ্য নেতৃত্ব ও শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের প্রাক্তন সভাধিপতি তাপস সরকার কে সঙ্গে নিয়ে ওই এলাকার পার্টি নেতা সিপিআইএম জেলা কমিটির সদস্য জ্যোতি প্রকাশ ঘোষ এর সাথে বাইকে চেপে নির্যাতিতার বাড়িতে পৌঁছন। বাড়ির সামনে কমব্যাট ফোর্সের বিশাল বাহিনী আবারও বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেয় নেতৃবৃন্দকে। মহিলা আন্দোলনের নেতৃত্ব পার্টির জেলা সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য হরিহর রায় বসুনিয়া বলেন এই গ্রামে ১৪৪ ধারা জারি রয়েছে কিনা, যদি জারি থাকে তা হলে তার নির্দেশ নামা দেখাতে বললে বিস্তর বাক-বিতণ্ডার চলে। পরে দুজন করে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করার অনুমতি দেয় পুলিশ। সামাজিক ন্যায় বিচার মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক অলকেশ দাস মহিলা নেত্রী রিনা সরকার, প্রাক্তন জেলা পরিষদের সভাধিপতি দীপ্তি দত্ত, প্রাক্তন বিধায়ক মমতা রায় নির্যাতিতার বাবাকে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার সাহস যোগান এবং বলেন সর্বতো ভাবে তারা সব রকম সাহায্য নিয়ে তাদের পরিবারের পাশে থাকবেন।
জলপাইগুড়ির ময়নাগুড়ি ধর্মপুর এলাকার বাসিন্দা ওই নাবালিকা বাড়িতে একাই ছিল। অভিযোগ, বাড়ি ফাঁকা থাকার সুযোগ নিয়ে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় এক যুবক তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। তার জামাকাপড় ছিঁড়ে দেয়। এমনকি তার গোপনাঙ্গে পর্যন্ত হাত দেয়। এরপরই নাবালিকা চিৎকার করে উঠলে অভিযুক্ত যুবক পালিয়ে যায়। এরপরই ময়নাগুড়ি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করে নির্যাতিতা নাবালিকার পরিবার। তবে ঘটনার পর থেকেই এলাকা ছেড়ে উধাও হয়ে যায় অভিযুক্ত যুবক ও তার দলবল। অভিযোগ, পরিবার থানায় অভিযোগ দায়ের করার কিছুদিন পরই অভিযুক্ত আদালত থেকে জামিন নিয়ে নেয়। এরপরই এক নির্জন দুপুরে দুই যুবক তাদের বাড়িতে মুখ ঢেকে আসে বলে অভিযোগ। সেই সময় ওই নির্যাতিতা নাবালিকা বাড়িতে একাই ছিল। অভিযোগ, তারা এসে ওই নাবালিকাকে অভিযুক্ত ওই যুবকের বিরুদ্ধে দায়ের করা অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিতে বলে। পাশাপাশি, যদি অভিযোগ তুলে না নেওয়া হয়, তবে তাদের বাড়ির সকলকে খুন করা হবে বলেও হুমকি দেয়। ভয় পেয়ে প্রথমে সে কথা চেপে গেলেও পরে নাবালিকা বাড়ির সকলকে হুমকির কথা খুলে বলে। এরপরই বাড়িতে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করে ওই নাবালিকা। গুরুতর জখম অবস্থায় তাকে প্রথমে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে তাকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে স্থানান্তরিত করা হয়। গতকাল ভোরে মৃত্যু হয় নির্যাতিতা ছাত্রীটির। সামাজিক ন্যায় বিচার মঞ্চের রাজ্য সম্পাদক অলকেশ দাস ক্ষোভের সুরে জানান, এক মাসের বেশি সময় ধরে পুলিস অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে পারেনি। যে দু-একজনকে ধরা হয়েছিল তারাও জামিন পেয়ে বাড়িতে এসে মেয়েটিকে হুমকি দেয়। আতঙ্কে মেয়েটি আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে বাধ্য হল, যার পরিণতি মৃত্যু। সেই সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছিল, সেই পুলিশই আজ কমব্যাট ফোর্স নিয়ে নির্যাতিতার বাড়ি গ্রাম ঘিরে রেখেছে যাতে সেই পরিবারের পাশে কেউ দাঁড়াতে না পারে। কারণ অভিযুক্তরা তৃণমূল দলের লোক ভাবতে লজ্জা হয় এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী একজন মহিলা। আমরা আমাদের ক্ষুদ্র সামর্থ্য নিয়ে সব রকম ভাবে পরিবারের পাশে থাকবো। সারা ভারত গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির জেলা সম্পাদিকা রিনা সরকার পরিবারের হাতে সামান্য অর্থ সাহায্য তুলে দেন। সিপিআইএমের পক্ষ থেকে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ময়নাগুড়ি শহরে মোমবাতি জ্বালিয়ে নির্যাতিতা নাবালিকার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়।