উত্তরবঙ্গ নিউজ : মালদা : ৭ ই জুলাই ২০২২ : বৃহস্পতিবার : মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের তৃণমূলের এক যুব নেতার বিরুদ্ধে আপার প্রাইমারীতে চাকরি করে দেওয়ার নাম করে তৃণমূলেরই এক অঞ্চল যুব সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সদস্যের কাছ থেকে সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল। পাশাপাশি আরও অভিযোগ ছিল আড়াই বছর আগে দেওয়া টাকা চাইতে গেলে এখন প্রাণ-নাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। সেই নিয়ে গত সপ্তাহে ওই তৃণমূলের যুব নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছিল হরিশ্চন্দ্রপুর থানায়। কিন্তু সাত দিনের বেশি কেটে গেলেও এখনো পর্যন্ত প্রতারক তৃণমূলের ওই নেতা অধরা। ইতিমধ্যে হরিশ্চন্দ্রপুর পুলিশ মহিদুর রহমান নামক ওই প্রতারক যুব নেতার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। পুলিশের অনুমান ওই ব্যক্তি কোন জায়গায় গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে।
অভিযোগকারী তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য তথা তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি আরজাউল হকের দাবী ওই নেতা কে ধরা গেলে বড় বড় রাঘব বোয়ালের নাম উঠে আসবে। এমনকি এলাকার অনেক প্রভাবশালী তৃণমূল নেতারা মহিদুর রহমান নামক ওই প্রতারক ব্যক্তির পিছনে রয়েছে বলে তিনি ইঙ্গিত করেন। পাশাপাশি তিনি জানান, আজ হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ তদন্তের জন্য আমাদেরকে ডেকে পাঠিয়েছিল। আমরা সমস্ত রকম তথ্য তাদের হাতে তুলে দিয়েছি। হরিশ্চন্দ্রপুর ২ নম্বর ব্লক এলাকার সাদলিচক অঞ্চলের তৃণমূল অঞ্চল প্রেসিডেন্ট তথা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য আরজাউল হকের অভিযোগ ছিল, ২০১৯ সালে উচ্চ প্রাথমিকে শিক্ষকতার চাকরির জন্য পাশের গ্রাম সুলতাননগরের তৃণমূলের যুব নেতা মহিদুর রহমান ওরফে বাদলকে তিন দফায় সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা দেন তিনি। কিন্তু তিন বছর পেরিয়ে গেলেও যখন চাকরি মেলেনি। তখন টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি করেন তিনি। এলাকায় নেতৃত্বে সাহায্যে সভা বসিয়ে কিছু টাকা আদায় হলেও অধিকাংশ টাকা বাকি থেকে যায়। এরপর বারেবারে টাকার জন্য তাগাদা করলেও ফেরত পাননি এক টাকাও। বরং টাকা ফেরত চাইতে গেলে মিলেছে হুমকি। অভিযুক্ত মহিদুর রহমান ওরফে বাদল এলাকার তৃণমূল নেতা বলেই পরিচিত। এই ব্যাক্তির বিরুদ্ধে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন সাদলিচক গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল পঞ্চায়েত মেম্বার তথা ওই এলাকার যুব তৃণমূলের সভাপতি আরজাউল হক। অভিযোগ ২০০৯ সালে উচ্চ প্রাথমিকে চাকরি করিয়ে দেওয়া নাম করে সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা ঘুষ নিয়েছিলেন মহিদুর রহমান। ৩ বছর পরেও সেই চাকরি হয়নি। অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই এলাকা ছাড়া হয়েছেন তিনি। সুলতান নগর এলাকার স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ মইদুর রহমান নামক ওই যুবক চাকরি দেওয়ার নাম করে এলাকার অনেকের কাছ থেকে টাকা তুলেছে। অনেকেই ওর হুমকির ভয়ে প্রকাশ্যে মুখ খুলতে চাইছে না। যদিও বিজেপি জেলা সম্পাদক কিষান কেডিয়া কটাক্ষের সুর চরিয়ে বলেন রাজ্য-জুড়ে তৃণমূলের নেতারা চাকরি দেওয়ার নাম করে কোটি কোটি টাকা তুলেছে। এবার তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্যই প্রতারিত হলেন দলেরই তৃণমূল নেতার কাছে। মানুষ সব দেখছে, বুঝতে পারছে, পঞ্চায়েত ভোটে মানুষ যোগ্য জবাব দেবে।
অন্যদিকে ব্লক তৃণমূল কংগ্রেস সভাপতি হজরত আলী পাল্টা সাফাই দিয়ে বলেন চাকরি দেওয়ার নাম করে যে লক্ষ লক্ষ টাকা নিয়েছে তিনি তৃণমূলের কোন নেতা নয়। আর আমাদের পঞ্চায়েত সদস্য প্রতারিত হয়েছে অভিযোগ দায়ের করেছে থানায়। পুলিশ তদন্ত করছে। আইন আইনের পথেই চলবে। আর গোটা ঘটনা কে ঘিরে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজেপির তরজা। মূল অভিযোগকারী আরজাউল হকের বাবা মহম্মদ সাজাহান প্রাক্তন হাই স্কুল শিক্ষক জানান,গত সপ্তাহে আমরা অভিযোগ করেছিলাম এখনো পর্যন্ত অভিযুক্ত ওই প্রতারককে ধরা যায়নি। এই চক্রের পেছনে এলাকারই শাসক দলের বড় বড় মাথা আছে। পুলিশ তদন্ত করলেই সমস্ত কিছু বেরিয়ে আসবে। ছেলে আরজাউল ২০১৯ সালে আপার প্রাইমারি টেট্ (TET) পরীক্ষায় পাশ করে এবং ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পায়। তবে চাকরি পেতে অসফল হয়। সেই সুযোগে প্রতারক মহিদুর রহমান ওরফে বাদল চাকরি করিয়ে দেওয়ার নাম করে তার ছেলের কাছ থেকে তিন কিস্তিতে সাড়ে ১৪ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়। চাকরি দিতে পারেনি। পরবর্তী কালে জানতে পারে সে প্রতারণার শিকার হয়েছে। টাকা ফেরত চাইতে গেলে ওই যুবক টালবাহানা করতে শুরু করে। গ্রামে সালিশি সভা বসানো হয়। এরপর দুই কিস্তিতে ২ লক্ষ টাকা ফেরত দিলেও এখন সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা দেয়নি। আমরা জানতে পারলাম ওই ব্যক্তি এলাকা ছাড়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ অভিযুক্তের খোঁজে এলাকায় তল্লাশি চালানো হচ্ছে। পাশাপাশি অভিযুক্তর ব্যাপারে সমান্তরাল ভাবে তদন্ত চলছে।