উত্তরবঙ্গ নিউজ : মালদা : ১৮ ই জুলাই ২০২২ : সোমবার : উন্নতি প্রযুক্তির ভাটা না থাকার ফলে মাটির তৈরি জিনিসপত্রের কাজ করতে চরম সমস্যার মধ্যে পড়েছে। পাশাপাশি বন্ধ হয়ে রয়েছে সেরামিকের কাজও। এলাকার শিল্পীদের অভিযোগ জেলা প্রশাসন থেকে সরকারি কুড়িটি ভাটা করে দেওয়ার কথা হয়েছিল। তার মধ্যে দুটি ভাটা তৈরি করা হলো তার কাজ অসম্পূর্ণ হয়ে রয়েছে, এখনও সেই কাজ সমাপ্ত হয়নি। যার ফলে অস্থায়ী ভাবে ভাটা করে সেখানেই মাটির তৈরি জিনিসপত্র টপ, হাড়ি, কলসি পোড়ানো হচ্ছে। গরমে হাঁসফাঁস জনজীবন। প্রচন্ড দাবদহে জ্বলছে গোটা জেলা। তার মধ্যেই ৩৮ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মধ্যেই অস্থায়ী ভাটার তৈরি করে আগুনের মধ্যে থেকেই এলাকার মৃৎশিল্পীরা তাদের কাজ করছেন। সেই কাজ করতে গিয়ে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন।
জানা যায় কয়েক দশক ধরে সাবেকি পদ্ধতিতে গাজলের রানীগঞ্জ ১ অঞ্চলের শিমুলঝুড়ি এলাকার নিজ শিল্পীরা মাটির বাসনপত্র ফুলের টপ কাজ করে যাচ্ছেন। এই সব সামগ্রী বিক্রি করে টেনেটুনে চলত তাদের সংসার। কিন্তু জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কয়েক দফায় সরকারি সহায়তায় প্রশিক্ষণ এবং যন্ত্রচালিত টুল কিডস মেলায় বদলে গেছে মালদহের গাজলের রানীগঞ্জের শিমুলজুরির মৃৎশিল্পীদের চাল চিত্র। যন্ত্র চালিত টুল কিডসের জন্য বেড়ে গেছে উৎপাদন। বাহারি টবের পাশাপাশি মাটির পুতুল দৈনন্দিন ব্যবহারের সামগ্রিক ঘর সাজানোর নানা সরঞ্জাম তারা তৈরি করছেন। রাজ্যের পাশাপাশি উড়িষ্যা, মহারাষ্ট্র, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু সহ ভিন্ন রাজ্যে পাড়ি দিচ্ছে তাদেরই তৈরি নানা মাটির সামগ্রী। এলাকার প্রায় দেড়শোটি পরিবার তারা মাটির সামগ্রিক তৈরি করে থাকে। গৃহকর্তার পাশাপাশি বাড়ির মহিলারাও এই কাজে জড়িয়ে রয়েছেন। জেলা শিল্প কেন্দ্রের পক্ষ থেকে এলাকার প্রায় ৩০ জন শিল্পীকে মাটির পুতুল থেকে মাটির বিভিন্ন সামগ্রী তৈরীর প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। আমাদের বর্তমান সমস্যা এখানে কোন সরকারি ভাটা নেই সরকার থেকে বলা হয়েছিল কুড়িটি ভাটা করা হবে কিন্তু সেখানে দুটি ভাটা তৈরী হয়েছে তাও সেই কাজ এখনোও অব্দি অসম্পূর্ণ হয়ে রয়েছে। যার ফলে মাটির জিনিসপত্র পোড়াতে অসুবিধা হচ্ছে। এলাকার কুড়িটা সরকারের তরফ থেকে দেওয়া হয়েছিল দুটো হয়েছে তাও সেটা এখনো অসম্পূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে। দিনে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা রোজগার তাদের।
রানীগঞ্জ শিমুলঝুড়ি মৃৎশিল্পী হসমবায়ের সমিতির সম্পাদক খগেন পাল জানান, আমাদের ভাটা ঘর গুলি জেলা প্রশাসন যাতে অতি শীঘ্রই তৈরি করে দেয় পাশাপাশি বল মিল টা পেলে আমাদের খুব উপকার হবে। আমাদের হাতে বানানো মাটির জিনিসপত্রগুলোর চাহিদা দিনে দিনে বাড়ছে বেশি ক্ষেত্রে সিরামিক কাজের ভালো চাহিদা রয়েছে। কিন্তু আমরা চাহিদা থাকলেও মাল দিতে পারছি না কারণ বেশি পরিমাণে মাল তৈরি করতে গেলে ভাটা খুব দরকার। আর আমাদের ভাটার জেলা প্রশাসন থেকে কুড়িটি এলাকায় দেওয়ার কথা ছিল তার মধ্যে দুটি হয়েছে তাও অসম্পূর্ণ অবস্থায় রয়ে রয়েছে, এখনো পর্যন্ত উদ্বোধন হয়নি। এ বিষয়ে মালদা জেলা শিল্প কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার মানবেন্দ্র মন্ডল জানান, গাজলের শিমুলঝুড়ি এলাকার নিজ শিল্পীদের অন্যতম কাজের প্রশিক্ষণ ও অত্যাধুনিক যন্ত্র চালিত টুলস কিডস দিয়ে আমরা তাদের মনোন্নয়ন ও আয় বাড়াতে উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে এলাকার নিজ শিল্পীদের হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কাজ হয়েছে সেরামিকের কাজও শেখানো হয়েছে। জেলা শিল্প কেন্দ্রের তরফ থেকে বিল করা হয়েছে যন্ত্র চালিত বিভিন্ন টুল কিডস পটার্স হুইল এবং সম্প্রতি যন্ত্র চালিত মাটি মাখার চারটে মেশিন, ৪০টি পটাশ হুইল আটটি রং করার মেশিন। ইতিমধ্যে এলাকায় ভাটার তৈরি করার বিষয় এলাকার মানুষজনের নামে মঞ্জুর করা হয়েছে যা সম্পূর্ণই এন.আর.জি.এস. এর মাধ্যমে। যেহেতু বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গে এখন এন.আর.জি.এস. এর টাকা আসছে না সে হেতু আমরা ভাটার কাজগুলো করতে পারছি না। যে দুটো কাজ হয়েছে সে দুটো কাজ খুব শীঘ্রই শেষ হয়ে যাবে। আমাদের হাতে যখনই টাকা এসে যাবে তখনই আমরা এই ভাটাগুলি অসমাপ্ত কাজগুলি করে দেব।