উত্তরবঙ্গ নিউজ : জলপাইগুড়ি : ৪ ঠা মে ২০২৪ : মঙ্গলবার : (সংবাদ দাতা – রঞ্জন সাহা ) :টানা বৃষ্টিতেও উৎপাদন কমেনি টোকলাইয়ের চা গবেষণা কেন্দ্রের রিপোর্টের বিরোধীতা সব পক্ষের।
চা উৎপাদনে মার্চ মাসের ক্ষতিপূরণ করছে এপ্রিল মাসের উৎপাদন, এমনিই তথ্য জানিয়েছে অসমের টোকলাইয়ের চা গবেষণা কেন্দ্রের রিপোর্টে। চা গবেষণা কেন্দ্র তথা টিআরএ-এর তরফে প্রতি মাসের আবহাওয়া এবং উৎপাদনের সমীক্ষা রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। এপ্রিল মাসের রিপোর্টে ডুয়ার্স-তরাই-দার্জিলিং এর বৃষ্টির ব্যপক ঘাটতির তথ্য উল্লেখ্য করা হয়েছে। সেই সঙ্গে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে এপ্রিল মাসে ডুয়ার্সে চা পাতার উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২৭ শতাংশ। তারফলে এ বছরের প্রথম ফ্লাশে সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধিরও ইঙ্গিত রয়েছে। যদিও এই রিপোর্ট মানতে রাজি নয় চা উৎপাদকেরা। তাঁদের দাবি বাস্তব পরিস্থিতি খুবই খারাপ। বৃষ্টির অভাবে এপ্রিল মাসের উৎপাদন অর্ধেক হয়েছে। তাহলে চা পর্ষদেরই গবেষণা শাখা টিআরএ-য়ের রিপোর্টে উৎপাদন বৃদ্ধির তথ্য এল কোথা থেকে প্রশ্ন চা উৎপাদনের সাথে যুক্ত বিভিন্ন স়ংগঠনের।
টিআরএ-এর এক বৈজ্ঞানিকের কথায়, আমাদের যে রিপোর্ট প্রকাশ হয় তাতে ডুয়ার্সের কিছু এলাকাভিত্তিক বাগানের তথ্য নেওয়া হয়ে থাকে। যেমন চালসা, ডামডিম,নাগরাকাটা, বিন্নাগুড়ি, কালচিনি, জয়ন্তী, দলগাঁও এলাকার বাছাই করা কিছু চা বাগানের তথ্য নেওয়া হয়। কমবেশি ৬০টি চা বাগানের তথ্য নেওয়া হয় এই পরিসংখ্যান রিপোর্ট তৈরিতে। ডুয়ার্সে বড় বাগানের সংখ্যা অন্তত ১৮০টি। তাই সামগ্রিক তথ্যের সঙ্গে নিখুঁত মিল নাও থাকতে পারে। টিআরএ-এর দাবি, এই রিপোর্টের ওপরে ভিত্তি করে মার্চ মাসের তুলনায় এপ্রিল মাসে উৎপাদন কিছুটা হলেও বাড়েছে সে কথা বলাই যায়। বৃষ্টির অভাবে মার্চ মাসে উতপাদন প্রায় অর্ধেক কমে গিয়েছিল। এপ্রিল মাসেও বৃষ্টি হয়নি। তাহলে উতপাদন বৃদ্ধি হবে কেন এ প্রশ্নের জবাবে টিআরএ-এর তরফে দাবি করা হয় মার্চ মাস জুড়ে বৃষ্টি হয়নি দেখে বহু বাগান বৃষ্টির অপেক্ষা না করে এপ্রিল মাসে জলসেচের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছিল তাতেই উতপাদন কিছুটা বেড়েছে।
চা বাগান মজদুর ইউনিয়নের জলপাইগুড়ি জেলা সম্পাদক সি আই টি ইউ এর সর্বভারতীয় নেতৃত্ব জিয়াউল আলমের মতে বিভিন্ন প্যারামিটার বিশ্লেষণ করে রিপোর্ট তৈরি হয় ঠিকই কিন্তু সামগ্রিক ডুয়ার্সের বর্তমান যে পরিস্থিতি তাতে মার্চ এপ্রিল মাসে অনাবৃষ্টির কারণে চা এর উৎপাদন সত্যিই কমেছে। এখন বেশ কয়েকদিনের হালকা বৃষ্টির প্রভাবে এই মাসের উৎপাদন আশা করা যায় খানিকটা বাড়বে জল সেচের খরচ কিছুটা কমলে কমবে উৎপাদন খরচও। যদিও উৎপাদকদের আর একটি অংশের দাবি টিআরএ শুধু কত পরিমাণ পাতা তোলা হল তার হিসেব নেই। তোলা পাতার মধ্যে কতটা খারাপ বের হল সে হিসেব ধরে না। সে কারণে বাস্তবের সঙ্গে তথ্যে মিল থাকবে না। ক্ষুদ্র চা চাষিদের সর্বভারতীয় সংগঠনের সভাপতি বিজয়গোপাল চক্রবর্তী বলেন, টিআরএ-এর রিপোর্ট সামগ্রিক নয়, এতে অনেক শর্ত থাকে। চা পর্ষদের প্রকাশ করা রিপোর্টে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যাবে। প্রতি মাসে কত চা উৎপাদন হচ্ছে তার হিসেব প্রকাশ করে চা পর্ষদ, সেই হিসেবকেই উৎপাদনের মাপকাঠি ধরেন অনেকে। চা বাগান পরিচালকদের সংগঠন টি অ্যাসোসিয়েশ অব ইন্ডিয়ার উত্তরবঙ্গের সাধারণ সম্পাদক সুমিত ঘোষ বলেন, টিআরএ কোথা থেকে এমন তথ্য পেয়েছে তা জানি না। চা বাগিচায় পরিস্থিতি খুবই খারাপ। এপ্রিল মাসে উৎপাদন ব্যপক কমেছে। ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোসিয়েশনের ডুয়ার্স শাখার চেয়ারম্যান জীবনচন্দ্র পান্ডে বলেন, বৃষ্টি না থাকায় এপ্রিল মাসে পাতার রস শুকিয়ে গিয়েছিল, উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।