উত্তর দিনাজপুর : কালিয়াগঞ্জ : ২১শে ডিসেম্বর ২০২০ : সোমবার : ১৯৮৭ সালে কালিয়াগঞ্জ ব্লকের ২ টি অঞ্চল কে নিয়ে গঠিত হয় কালিয়াগঞ্জ পৌরসভা। এই পৌরসভা গঠিত হওয়ার পর কালিয়াগঞ্জ শহরের তকমা পায়। কিন্তু এই পৌরশহর কে সার্বিক উন্নয়নের জন্য তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার তেমন কোনো কিছুই আর্থিক সাহায্য করে নি তার একটাই কারণ ছিল কালিয়াগঞ্জ পৌরসভা কংগ্রেস পরিচালিত পৌর বোর্ড থাকায়। তবে দীর্ঘ ২৩ বছর কালিয়াগঞ্জ কংগ্রেস এবং কংগ্রেস পরিচালিত পৌর বোর্ড তেমন ভাবে কালিয়াগঞ্জ পৌর এলাকার উন্নয়নের জন্য তদারকি করেও নি। করলে হয়তো বামফ্রন্ট সরকারের আমলে নগর উন্নয়ন দপ্তর থেকে কালিয়াগঞ্জ পৌরসভার পৌর উন্নয়নের জন্য আর্থিক বরাদ্দ পেত। তবে রাজনৈতিক ফায়দাও ছিল একটা অন্যতম কারণ। ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকারের পতন হয়ে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে গঠিত হয় পরিবর্তনের সরকার। ২০১১ সাল থেকে ২০১৬ এই ৫ বছরেও পরিবর্তন সরকারের আমলে কালিয়াগঞ্জ কংগ্রেস পরিচালিত পৌর বোর্ড কিন্তু ব্যর্থ হয় জনস্বার্থে কালিয়াগঞ্জ পৌর এলাকার উন্নয়ন ঘটাতে। এখানেও রাজনৈতিক ফায়দার চিত্র ফুটে উঠে। রাজ্যের শাসনভার যে রাজনৈতিক দলের অন্তর্গত ঠিক সেই সময়কালে বিরোধী রাজনৈতিক দল পরিচালিত কালিয়াগঞ্জ পৌর বোর্ড হওয়ায় হয়তো তেমন ভাবে কালিয়াগঞ্জ পৌর এলাকার উন্নয়নের জন্য আর্থিক সহায়তা পায় নি। কিন্তু সেই অবহেলার অবসান ঘটে ২০১৬ সালের মাঝপথে। সেই সময় রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন এলাকার উন্নয়নের স্বাদ পেতে , উন্নয়নে সামিল হতে বিভিন্ন তৃণমূল কংগ্রেস বিরোধী রাজনৈতিক দল থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্বরা দলবেঁধে তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান করতে শুরু করে। এরই সুত্র ধরে কালিয়াগঞ্জ কংগ্রেস পরিচালিত পৌর বোর্ড পরিবর্তন হয়ে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পৌর বোর্ডে রুপান্তরিত হয়ে যায়।
কালিয়াগঞ্জ পৌরসভায় নতুন পৌর পতি হন কংগ্রেস দল ত্যাগ করে আসা কংগ্রেস কাউন্সিলর কার্তিক চন্দ্র পাল। তবে এইসময় কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক প্রয়াত প্রমথ নাথ রায়। আগাগোড়াই কালিয়াগঞ্জ কংগ্রেস ঘরানার রাজনৈতিক চাদরে মোড়া। তার অন্যতম কারণ কংগ্রেসের জাতীয় নেতা প্রয়াত প্রিয় রঞ্জন দাসমুন্সীর বাসস্থান ছিল কালিয়াগঞ্জে এবং রায়গঞ্জ লোকসভার সাংসদ ছিলেন প্রিয় রঞ্জন দাসমুন্সী। ২০১৬ সালের মাঝপথে কালিয়াগঞ্জ পৌরসভার পৌর বোর্ড তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত হতেই রাজনৈতিক ফায়দায় এলাকার ভোট ব্যাঙ্ক কে নিজেদের দিকে টানতে শুরু হয় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ও অনুপ্রেরণায় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নগর উন্নয়ন দপ্তর সহ অন্যান্য দপ্তরের আর্থিক প্যাকেজের মাধ্যমে কালিয়াগঞ্জ পৌর এলাকার সার্বিক উন্নয়নের স্বার্থে আর্থিক সহায়তা। একথা বাস্তব কালিয়াগঞ্জ শহরের আপামর জনসাধারণ চাক্ষুস দেখতে শুরু করেন কালিয়াগঞ্জ পৌর এলাকার একের পর এক উন্নয়ন। ১৭ টি ওয়ার্ডে শুরু হয় উন্নয়ন। নর্দমার কাজের সংস্করণ, নতুন নর্দমা, রাস্তা চওড়া সহ রাস্তায় আলোক বাতি স্তম্ভ, শিশু উদ্যান, নতুন পার্ক, নতুন বাস স্ট্যান্ড, শহর জুড়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের আনাচে কানাচে উচ্চ আলোকবাতি স্তম্ভ এবং ৫ কিলোমিটার শহরের উপর দিয়ে ১০ এ স্টেট হাইওয়ের উভয় পার্শ্বে চওড়া করে মাঝখানে ডিভাইডারের কাজ। ৩৩ বছরের পুরোনো কালিয়াগঞ্জ পৌর এলাকার উন্নয়নের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে প্রচুর টাকা বরাদ্দের জন্য পাশাপাশি অন্যান্য পৌর শহরগুলো একটু ভাবতে থাকে কালিয়াগঞ্জের উন্নয়ন কে নিয়ে। ২০১৯ সালে অসুস্থ হয়ে প্রয়াত হন কালিয়াগঞ্জের কংগ্রেস বিধায়ক প্রমথ নাথ রায়। তার মৃত্যুর আগে ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে কালিয়াগঞ্জ শহর ও ব্লক থেকে বিজেপির ভোট ব্যাঙ্কের সংখ্যা তৃণমূল কংগ্রেসের চেয়ে এগিয়ে ছিল কিন্তু কালিয়াগঞ্জ শহরের উন্নয়ন কে দেখে কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার উপনির্বাচনে কালিয়াগঞ্জ শহর ও ব্লকের জনগন তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী তপন দেব সিংহ কে দুইহাত তুলে আশীর্বাদ করায় এই প্রথম কালিয়াগঞ্জ বিধানসভা আসনটি তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে যায়। এলাকার সর্বস্তরের জনগণ একবাক্যে স্বীকার করে কালিয়াগঞ্জ পৌর এলাকা দিনের পর দিন উন্নয়নের চাদরে মুড়ে যাওয়ার কথা। শুধু স্বীকার নয় এলাকার জনগন এবং বিভিন্ন কাজে আসা বাহিরের মানুষ চাক্ষুস প্রমান পায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরণায় ও উদ্দ্যোগে কালিয়াগঞ্জ শহরের উন্নয়নের ছবি। এই সময়কালে পৌর পতি কার্তিক চন্দ্র পাল এর উপর দ্বায়িত্ব রেখেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নগর উন্নয়ন দপ্তর কালিয়াগঞ্জ শহরকে সাজিয়ে তুলতে থাকে। কালিয়াগঞ্জ পৌরসভার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়ার পরেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল কংগ্রেস অতি বিশ্বাসে কার্তিক চন্দ্র পাল কে পৌর প্রশাসকের আসনে আসীন করেন। ২০১৬ থেকে ২০২০ পর্যন্ত কয়েকশো কোটি টাকা বরাদ্দ করে পশ্চিমবঙ্গ সরকার কালিয়াগঞ্জ শহরের উন্নয়নে। কার্তিক চন্দ্র পাল এমনিতেই ব্যবসায়িক ঘড়ানার মানুষ অর্থাৎ কার্তিক চন্দ্র পাল একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী কালিয়াগঞ্জ শহরের। ইটের ভাটার ব্যবসা, কন্ট্রাক্টরী ব্যবসা সহ জমি ক্রয় বিক্রয়ের ব্যবসার সাথে যুক্ত আগাগোড়াই। কালিয়াগঞ্জ পৌর এলাকার বিভিন্ন সার্বিক উন্নয়নে নিজের ব্যবসার দেখভাল করার পাশাপাশি কালিয়াগঞ্জ পৌরসভার পৌরপতি হয়ে অধিক সময় অতিবাহিত করতেন কার্তিক চন্দ্র পাল জনগনের বৃহত্তর স্বার্থে। কালিয়াগঞ্জ পৌর এলাকার সার্বিক উন্নয়নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্দ্যোগে পৌরপতি তথা পৌর প্রশাসক হিসেবে কার্তিক চন্দ্র পাল ছিলেন একজন কান্ডারী। আর এই উন্নয়নের কান্ডারী হয়ে ও পৌর প্রশাসক পদে আসীন থেকেই কার্তিক চন্দ্র পাল দলবদল করে বর্তমানে বিজেপি দলে নাম লিখিয়েছেন। বর্তমানে কালিয়াগঞ্জ পৌরসভার পৌর প্রশাসক মন্ডলীর সদস্যদের কাছে এবং কালিয়াগঞ্জ বিধানসভার বিধায়ক তপন দেব সিংহর কাছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়েছেন কালিয়াগঞ্জ বাসীর পাশে থাকতে উন্নয়নকে সর্বস্তরে পৌঁছে দিতে। তবে কালিয়াগঞ্জের জনগন উপলব্ধি করতে পেরেছে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজ যে ভাবে দুয়ারে সরকার প্রকল্প অধীন রাজ্য সরকার বঙ্গধ্বনি যাত্রা দিয়ে শুরু করেছেন তাতে করে আগামী পৌর নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত পৌর বোর্ড কালিয়াগঞ্জ পৌরসভায় গঠিত হয় তাহলে কালিয়াগঞ্জ পৌর শহরের উন্নয়নের কর্মকাণ্ড আরো বিস্তৃতি ঘটবে এই বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।
