মালদা : ৫ই মার্চ ২০২১ : শুক্রবার : রাজ্যের প্রাক্তন দুই মন্ত্রী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী এবং সাবিত্রী মিত্রকে ইংরেজবাজার এবং মানিকচক বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করে এবার নির্বাচনী লড়াইয়ে নতুন সমীকরণ তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। পাশাপাশি ইংরেজবাজারের বর্তমান বিধায়ক নিহার ঘোষকে চাচল বিধানসভা কেন্দ্রে প্রার্থী করা হয়েছে। এছাড়াও এবারে মালদার ১২ টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে চারটি কেন্দ্রে নতুন মুখ আনা হয়েছে। সেগুলি হল – বৈষ্ণবনগর কেন্দ্রের চন্দনা সরকার, সুজাপুরে আব্দুল গনি, গাজোলে বাসন্তী বর্মন, হবিবপুরে সরলা মুর্মু। এবারে মালদার ১২ টি বিধানসভা কেন্দ্রের মধ্যে পাঁচ জন মহিলা প্রার্থী হয়েছেন।
তবে এদিন ইংরেজবাজার বিধানসভা কেন্দ্রে কৃষ্ণেন্দু চৌধুরীর নাম ঘোষণা হতেই উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়েন দলের কর্মী, সমর্থকেরা। রীতিমতো মালদা শহরের নেতাজি সুভাষ রোড এলাকায় আতশবাজি পুড়িয়ে শুভেচ্ছা জানান তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জিকে। দলের একাংশের দাবী, বিজেপিকে ঠেকাতে যোগ্য প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এবারের বিধানসভা নির্বাচনে হবিবপুরের প্রার্থী হয়েছেন সরলা মুর্মু। তিনি বর্তমানে মালদা জেলা পরিষদের নির্বাচিত সদস্য রয়েছেন। গাজলের প্রার্থী হয়েছেন বাসন্তী বর্মন। বাসন্তীদেবীর এক আত্মীয় গাজোল ব্লকের তৃণমূল দলের সভাপতি পদে রয়েছেন । চাচলে প্রার্থী হয়েছেন নিহার রঞ্জন ঘোষ । তিনি ইংরেজবাজারের বিধায়ক রয়েছেন। হরিশ্চন্দ্রপুরের প্রার্থী হয়েছেন তাজমুল হোসেন, তিনি তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক ছিলেন। মালতিপুরের প্রার্থী করা হয়েছে আব্দুর রহিম বক্সীকে তুমিও প্রাক্তন বিধায়ক। একইভাবে রতুয়া বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন সমর মুখার্জী , বর্তমানে তিনি তৃণমূলের বিনাশ পদে রয়েছেন ।
মানিকচকের প্রার্থী হয়েছেন সাবিত্রী মিত্র, মালদা বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন উজ্জল চৌধুরি, ইংরেজবাজার কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী, মোথাবাড়ি কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন সাবিনা ইয়াসমিন , সুজাপুর কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন আব্দুল গনি এবং বৈষ্ণবনগর কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন চন্দনা সরকার। তিনি মালদা জেলা পরিষদের বর্তমানে সহকারি সভাপতি পদে রয়েছেন। এদিকে রাজ্যের দুই প্রাক্তন মন্ত্রী ছিলেন মালদা মানিকচক বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক সাবিত্রী মিত্র এবং ইংরেজবাজারের বিধায়ক কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী । গত বিধানসভা নির্বাচনে তারা পরাজিত হয়। কিন্তু তাদের মধ্যে আগাগোড়াই বাকবিতণ্ডা ছিল তুঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মালদা শহরে এসে এই দুই নেতানেত্রীদের সতর্ক করে গিয়েছিলেন। তার পরেও প্রাক্তন দুই মন্ত্রীর উপর আস্থা রেখেছে রাজ্য তৃণমূল নেতৃত্ব। তাই নতুন করে তাদের প্রার্থী দাঁড় করিয়ে নির্বাচনী লড়াইয়ে বাজিমাত করতে চাইছে রাজ্য নেতৃত্ব। এদিকে বুধবার কলকাতার কালীঘাটের বাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মালদার ১২টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করতেই দলীয় কর্মী , সমর্থকদের মধ্যে ব্যাপক উচ্ছাস দেখা যায় ।
এবারে এই কেন্দ্রগুলিতে ব্যাপক লড়াই হবে বলেও বিভিন্ন কেন্দ্রে প্রার্থীরা দাবি করেছেন। এদিন ইংরেজবাজার বিধানসভা কেন্দ্রের নিজের নাম ঘোষণা হতেই সাংবাদিকদের সামনে তৃণমূল প্রার্থী কৃষ্ণেন্দু চৌধুরী বলেন, আমি এর আগে তিনবারের বিধায়ক পদের দায়িত্ব সামলেছি। রাজ্যের মন্ত্রী দায়িত্বও সামলিয়েছে। তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে অসংখ্য ধন্যবাদ , উনি আমাকে এই কেন্দ্রের প্রার্থী করেছেন। এখন আমার কাছে এই আসনে নির্বাচিত হয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জিকে উপহার হিসেবে দিতে চাই। বিজেপি, সিপিএম-কংগ্রেসকে পরাজিত করে মানুষ উন্নয়নের পক্ষে রায় দেবে।
অন্যদিকে চাচলে তৃণমূলের বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হয়েছেন ইংরেজবাজারের বর্তমান বিধায়ক নিহার ঘোষ। তিনি বলেন, দলনেত্রী মমতা ব্যানার্জি যা ভালো বুঝেছেন সেটাই করেছেন। আমার কাছে চাচোল নতুন জায়গা নয় । বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে আমি ওই বিধানসভা কেন্দ্রে গিয়েছি। চাচোলে এবারের লড়াইটা অন্যরকম হবে। সেখানে ১০০ শতাংশ তৃনমূল জয়ী হবে বলে আশা করছি। নতুন প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেন বৈষ্ণবনগরের চন্দনা সরকার, হবিবপুরের সরলা মুর্মু তাদের বক্তব্য , মুখ্যমন্ত্রীর উন্নয়নের পক্ষে মানুষ রায় দেবে। সাম্প্রদায়িক দল বিজেপির কথায় প্রোরচিত হবে না মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি যে ভাবে উন্নয়ন করেছেন, সে দিকে তাকিয়েই এবারের নির্বাচন হবে। এবারে মালদার ফল অনেকটাই ভাল হবে বলে আশা রাখছি। তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা রাজ্যসভার সাংসদ মৌসুম নূর জানিয়েছেন , মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি মালদার বারোটি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী ঘোষণা করেছেন । নবীন-প্রবীণ সকলকে মিলিয়ে প্রার্থী তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এজন্য আমরা এখন থেকেই নির্বাচনে লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। এবার মালদার সবকটি আসন মুখ্যমন্ত্রীকে উপহার হিসেবে তুলে দিতে চাই।