জলপাইগুড়ি : মালবাজার : গরুবাথান : ১০ই জুন ২০২১ : বৃহস্পতিবার : দেখলে বা পড়লে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যখন সারা বিশ্ব করোনার অতিমারিতে বিপর্যস্ত, তখন প্রকৃতির কোলে অবস্থিত একটি গ্রাম যে গ্রামে আজও করোনার থাবা বসাতে পারেনি, নেই কোন মুখে মাস্ক, জানে না রসায়নযুক্ত স্যানিটাইজার। কিন্তু হ্যাঁ বিষাক্ত পোকামাকড় কে মারার জন্য তারা এলাকার একটি ভেষজ গাছ ব্যবহার করে, নাম তার টিতেপাতি, ইংরেজি তে বলা হয় আর্টিমিসিয়া (Artemisia)। এই সেই ভেষজ গাছের পাতা জলে ভিজিয়ে শরীরে অথবা বাড়িতে ছিটিয়ে দেয়। আর বাড়ি হয়ে যায় ফুল সেনিটাইস। এলাকার তরুণ যুবকরা বলে, মাস্ক পড়লে নাকি তাদের নিঃশ্বাস এবং প্রশ্বাসের সমস্যা হয়।
একটু শুনে অবাক হচ্ছেন না? হ্যাঁ,এই সেই গ্রাম সমুদ্রতল থেকে ৬২০১ ফিট উপরে অবস্থিত গরুবাথান ব্লকের একটি গ্রাম ঝান্ডি এবং সুন্তালে। কোরোনা আবহাওয়া কালে এখনও থাবা বসাতে পারেনি এই মারণ করোনা ভাইরাস।
গত দুমাস ধরে কলকাতা দম্পতি করোনার ভয়ে এই গ্রামে এসে স্বচ্ছন্দে জীবন যাপন করছে । শুধু তারাই নয়, আরো কিছু মানুষ গত দুমাস ধরেই এই সব গ্রামেই রয়েছে। তাদের বক্তব্য যখন কোলকাতা সহ উত্তরবঙ্গে করোনার গ্রাফ উর্দ্ধে এবং আমাদের মত বয়স্ক মানুষ করোনাকে ভয় পেয়ে একঘরে হয়ে বসে ছিলাম। তখন আমার একমাত্র সন্তান আমাদের কে যেন না হারিয়ে ফেলে, তার জন্য আমাদেরকে এক প্রত্যন্ত পাহাড়ী গ্রাম ঝান্ডি নিয়ে রেখেছে যাতে ছেলের চোখে থেকে যেন আমরা করোণা আবহাওয়াতে এ পৃথিবী ছেড়ে না চলে যাই।
এই দুই দম্পতিসহ কয়েকটি পরিবার খুব আনন্দে এই গ্রামের সময় কাটাচ্ছেন। উনাদের বক্তব্য, এই সবুজ গ্রাম যেখানে এখনও শীতের আমেজ ও চাদর গায়ে দিয়ে আছি। এত ভালো গ্রাম ছেড়ে কলকাতার ব্যস্ত শহরে ফিরতে আর ইচ্ছে করে না। তবে করোনার প্রকোপ কমলেই আবার ফিরবো কোলকাতায়। এই সবুজে ভরা গ্রামে প্রকৃতি এত শক্তিশালী যে, কোরোনা এখানে থাবা বসাতে দেয়নি। তাই সব মানুষরা এখানে সুরক্ষিত। আমরা কি পারিনা করোনা মুক্ত শহর তৈরি করতে? আমরা কি পারি না সবুজায়ন তৈরি করতে? দাবি এই বাঙ্গালী পরিবারের। এখানে এত ভালো লাগছে যে পাহাড় কে ছেড়ে আর কলকাতার ব্যস্ত শহরে ফিরে যেতে ইচ্ছেই করছে না। তবু কর্মস্থলে যেতেই হবে। ভগবানের কাছে প্রার্থনা করছি দ্রুত করোনা ভাইরাস নির্মুল হোক আমাদের দেশ থেকে।