দক্ষিণ দিনাজপুরঃ ২৯শে জানুয়ারী, বুধবারঃ দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার গঙ্গারামপুর শহরের ১নং ওয়ার্ডের কাদিঘাট এলাকায় দীর্ঘ ১০০ বছরের বেশি সময় ধরে প্রাকৃতিক উপায়ে ঝিনুক থেকে চুন প্রস্তুত করছেন এখানকার তামলি সম্প্রদায়ের ৫ পরিবারের সদস্যরা। এই সদস্যদের চুন তৈরি করে রুজি-রোজগার হয়। গঙ্গারামপুর-মালদা ৫১২ নং জাতীয় সড়কের কাদিঘাট এলাকায় সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তার ধারে দেখা যায় বড় বড় উনুনে ঝিনুক পুড়িয়ে চুন প্রস্তুত চলছে। এই বিষয়ে চুন প্রস্তুতকারী বিজয় তামলি ও বিমল তামলি জানান, প্রাকৃতিক ভাবে এই চুন প্রস্তুত করা এবং নানান গ্রাম থেকে নদীর ঝিনুক তারা কিনে নিয়ে সংগ্রহ করেন এবং সেগুলো নিয়ে এসে চুন তৈরি করেন।
এই চুন তৈরি করার কাজটিও বেশ খাটুনির, ২৪ ঘন্টা ধরে বড় বড় উনুনে পোড়ানো হয়, এরপর তা ছাঁকনি দিয়ে ছেঁকে আবার তাকে জল দিয়ে রেখে তিন ঘন্টা ঘোলাতে হয়, তারপর কাপড়ে ছেঁকে রাখার পর সেটি যখন আস্তে আস্তে জমতে শুরু করে তখন বিক্রির জন্য প্রস্তুত করা হয় । সেটিকে প্যাকেট করে গ্রামে গঞ্জে হাটে বাজারে বিক্রি করে থাকেন তারা। এই বিষয়ে সঞ্জয় তামলি নামে আরেক চুন প্রস্তুতকারী জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী চুনের উপর ঋণ থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত তারা কোন রকম সরকারি সহযোগিতা পায়নি। এই তামলি সম্প্রদায়ের ৫ পরিবারের সদস্যরা ১৫-২০ হাজার টাকা আয় করলেও গ্রাম থেকে ঝিনুক সংগ্রহ করতে যে পরিমাণ টাকা খরচ হয় তাতেই তাদের প্রায় সব চলে যায়। কোন রকমে টেনেটুনে সংসার চালাতে হয় তাদের। গ্রাম থেকে ২০০ টাকা করে ঝিনুক কিনে বাড়িতে নিয়ে এসে চুন প্রস্তুত করে ৩ টাকা প্যাকেট হিসেবে তারা বিক্রি করে থাকেন। এই চুন শুধুমাত্র পানে খাওয়ার জন্য বিক্রি হয়। বর্তমানে পাথরের চুন বাজারে আসায় তাদের এই ব্যবসা মার খেয়েছে, পাশাপাশি লাভের মুখ নেই বললে চলে। তাই তাদের কথা চিন্তা করে যদি সরকার একটিবার সাহায্য করে তাহলে তারা উপকৃত হবে। পূর্ব-পুরুষদের থেকে চলে আসা তামলি সম্প্রদায়ের প্রাকৃতিক নিয়মে চুনপ্রস্তুত ব্যবসাকে টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর এই ৫ টি পরিবারের সদস্যরা।