উত্তরবঙ্গ নিউজ : মালদা : ৩রা আগষ্ট ২০২১ : মঙ্গলবার : (সংবাদ দাতা : বিশ্বজিৎ মন্ডল ) : রাস্তা ভাঙা নিয়ে রাজনৈতিক তরজা। সাধারণ মানুষ প্রতিবাদ করলে তাদের ওপর চড়াও হওয়ার অভিযোগ, ঠিকাদার তথা যুব তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। পঞ্চায়েতের কাজ এবং ভূমিকায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। রাস্তা নির্মাণে দুর্নীতি নিয়ে সরব কংগ্রেস। যদিও এসব কংগ্রেসের চক্রান্ত বলে দাবী তৃণমূলের। তৃণমূলের নেতারা ঠিকাদার হলে কি রকম কাজ হবে সেটা সবাই জানে। কাটমানি ছাড়া কোন কাজ হয় না বলে তীব্র কটাক্ষ কংগ্রেসের। ছয় মাসও পেরোল না, হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ল রাস্তা। লক্ষাধিক লক্ষ টাকা ব্যায়ে সদ্য নির্মিত ৭০ মিটার রাস্তার অর্ধেক অংশই ধ্বসে পড়ল। বাকি অংশ জুড়েও তৈরি হয়েছে বড় বড় ফাটল। এই ঘটনায় তীব্র উত্তেজনা মালদা জেলার হরিশ্চন্দ্রপুরের মহেন্দ্রপুরে। বিক্ষুদ্ধ গ্রামবাসীদের সঙ্গে হাতাহাতি যুব তৃণমূল নেতার। অন্যদিকে ঠিকাদার স্বংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ বিডিওর। গ্রামবাসীদের অভিযোগ এই রাস্তা নির্মাণের ঠিকাদারি পেয়েছিলেন তাঁরই ভাই। মোটা অঙ্কের কাটমানি খাওয়ারও অভিযোগ উঠেছে ওই নেতা সহ তৃণমূলের আরও কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে। মহেন্দ্রপুরে বিরাট জলাশয়ের পাশে বাঁধের মত উঁচু জায়গায় ঢালাই রাস্তা করার বরাত দেওয়া হয়। গত ছয় মাস আগেই সেই রাস্তা তৈরি হয়। লক্ষাধিক লক্ষ টাকা খরচ করে ৭০ মিটার রাস্তা তৈরি হয়। কিন্তু গত কয়েকদিন ধরে ফাটল দেখা দেয়। আচমকা রাস্তার অর্ধেক অংশই ধ্বসে পড়ে। বাকি অংশেও দেখা দিয়েছে বড় বড় ফাটল। যে কোনো মুহূর্তে বাকি অংশও ধ্বসে যেতে পারে। সম্ভাবনা রয়েছে বড় দুর্ঘটনার। তাই এই পথ দিয়ে যাতায়াত প্রায় বন্ধ। এদিকে নব নির্মিত রাস্তা এভাবে ধ্বসে যাওয়ার পরেই এলাকায় পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে গিয়ে যুব তৃণমূল নেতা বিক্ষোভের মুখে পড়েন। জনতা প্রায় মারমুখী হয়ে পড়ে। হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। এমনকি স্থানীয়দের ওই যুব তৃণমূল নেতা অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন বলে অভিযোগ। দলীয় অন্যন্য নেতারা ছুটে এসে পরিস্থিতির সামাল দেয়।
এদিকে খুব গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তা। হাসপাতাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় যেতে হলে এই রাস্তা ধরেই যেতে হয় বহু মানুষকে। সেই রাস্তার এমন অবস্থা হওয়ায় তীব্র ক্ষোভ দেখা দিয়েছে গ্রামবাসীদের মধ্যে। ক্ষুব্ধ ব্লক প্রশাসনও সদ্য নির্মিত রাস্তার এমন বেহাল দশা দেখে। ইতিমধ্যেই ঠিকাদার স্বংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এক এলাকাবাসী উমিমুল হক বলেন, যখন রাস্তার কাজ হচ্ছিল তখন যদি মাটি ফেলে কাজ করা হতো এমন হতো না। কিন্তু সেটা হয়নি। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হয়েছে। ফলে এই ভাবে রাস্তা ভেঙে গেল। আমরা এর প্রতিবাদ জানাতে গেলে আমাদের উপরই চড়াও হচ্ছে। এই দায় পঞ্চায়েতের। যুব তৃণমূল সহ-সভাপতি রুস্তম আলী বলেন, এই রাস্তা ৬ মাস নয় ২ বছর আগে হয়েছে। কয়েকদিন ধরে প্রচন্ড বৃষ্টি হয়েছে। জলাশয় ভরাট হয়ে বৃষ্টির জল উঠে রাস্তার ভেতর ঢুকেছে। ফলে রাস্তা ভেঙে গেছে। কিন্তু রাস্তা নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে তৈরি হয়নি। এসব কংগ্রেসের চক্রান্ত। নিজেদের অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে তাই মিথ্যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে। পাল্টা কংগ্রেসের অঞ্চল সভাপতি আব্দুস শুভান বলেন, তৃণমূলের নেতারাই এখন ঠিকাদার। আর তৃণমূলের নেতারা ঠিকাদার হলে কি রকম কাজ হবে সেটা সবাই জানে। কাটমানি ছাড়া কোন কাজ হয় না। এই রাস্তা এলাকার অন্যতম ব্যস্ত রাস্তা। যা ভেঙে যাওয়ার ফলে বহু মানুষকে সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। এতটাই নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হয়েছে যে ছয় মাসের মধ্যে রাস্তা ভেঙে পড়ল। আমরা এর প্রতিবাদ করতে গেলে উন্নয়ন বাহিনী আমাদের উপর চড়াও হচ্ছে। পাল্টা আমাদেরকেই হুমকি দিচ্ছে। হরিশ্চন্দ্রপুর ১ ব্লকের জয়েন্ট বিডিও বিপ্লব কুমার ঘোষ বলেন, এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি। কিন্তু আমরা আমাদের সূত্র মারফত জানতে পেরেছি। ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হবে। কেন রাস্তা তৈরির কিছুদিনের মধ্যেই রাস্তা ভেঙে গেল। যদি নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে কাজ হয় সে ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রাস্তা ভাঙ্গার ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূল এবং কংগ্রেসের মধ্যে রাজনৈতিক তরজা। এদিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে বিডিও। প্রশাসনের উচিত এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত করা। কারণ এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা ভেঙে পড়ায় সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। আর যেখানে কিছুদিন আগেই এই রাস্তা তৈরি হয়েছে বলে মানুষ জানাচ্ছে। প্রশাসন কঠোর হলেই সরকারি কাজে দুর্নীতি বন্ধ হবে মানুষের দাবী।