26.4 C
New York
Thursday, June 19, 2025

Buy now

spot_img

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ। অন্তস্বত্তা হয়ে পড়ে নাবালিকা। অভিযোগ জানাতে গেলে উল্টে একঘরে পরিবার।

উত্তরবঙ্গ নিউজ : মালদা : ৩রা আগষ্ট ২০২১ : মঙ্গলবার : (সংবাদ দাতা : বিশ্বজিৎ মন্ডল ) : অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণ,পুলিশে অভিযোগ করতে গেলে হুমকির সম্মুখীন পরিবার, ধর্ষককে পালাতে সাহায্য, অভিযোগ এলাকার স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে, তৃণমূলকে বদনাম করার ষড়যন্ত্র বিজেপি দাবী তৃণমূলের, ধর্ষণের রাজনীতি করছে তৃণমূল পাল্টা বিজেপি।

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ। অভিযোগ জানাতে গেলে উল্টে একঘরে পরিবার। গ্রামেই সালিসিতে  বিষয়টিকে মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ স্থানীয় তৃণমূল নেতাদের। সালিসির নামে ওই যুবককে পালাতেও সাহায্য করা হয় বলে অভিযোগ। অন্যদিকে ৫ মাসের অন্তস্বত্তা হয়ে পড়েছে ওই নাবালিকা। গ্রামের মধ্যে একঘরে, ঘরবন্দী। নিয়মিত চলছে হুমকি থানায় গিয়ে অভিযোগ না জানানোর জন্যে। তবুও গোপনে মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় গিয়ে পুলিশের দ্বারস্থ হলেন নাবালিকার মা। ঘটনায় চাঞ্চল্য মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকায়। ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে হরিশ্চন্দ্রপুর থানার পুলিশ। গ্রামের স্থানীয় স্কুলে অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। মা-বাবা দিনমজুর। গত ফেব্রুয়ারী মাসের ২১ তারিখে যুবকের দিদি ডেকে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরে সেই যুবকের দিদি তাঁর দিদার বাড়ি যাবে বলে বেরিয়ে যায়। সেই সময় অন্য ঘরে ছিল অভিযুক্ত যুবক। সে এসে ওই নাবালিকাকে জোর করে অন্য ঘরে নিয়ে গিয়ে চাকু দেখিয়ে ভয় দেখায় এবং ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ। এরপর অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্রী কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরে আসে। তারপর থেকে কাউকে ঘটনার কথা জানালে কিশোরীকে প্রাণে মারার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। ভয়ে কিশোরী পরিবার বা কাউকেই কিছু জানাননি। কিন্তু কিশোরী অন্তঃস্বত্তা হতেই সম্প্রতি পরিবার বিষয়টি জানতে পারেন। পরে থানায় অভিযোগ জানানোর উদ্যোগ নিলে উল্টে হুমকির মুখে পড়তে হয় তাঁদের। গ্রামের কিছু প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা গ্রামেই শালিসি করে বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেয়। শালিসিও বসে। কিন্তু অভিযুক্ত যুবককে উলটে আড়াল করা হয়। এরপরে নাবালিকার মা প্রতিবাদ করতে গেলে পাল্টা হুমকির মুখে পড়তে হয়। শুধু তাই নয়, গ্রামের মধ্যে একরকম একঘরে করে রাখা হয় তাঁদের। নজর রাখা হয় তাঁরা থানায় অভিযোগ জানাতে যাচ্ছে কিনা। অভিযোগ, অভিযুক্ত যুবক ও তাঁর পরিবারের লোকজনের তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। আর সে কারণেই তাঁকে আড়াল করতে চায় তাঁরা। এদিকে প্রভাবশালী নেতা ও গ্রাম্য মাতব্বরদের দাপটে কিছুতেই সাহস করে থানায় যেতে পারে নি নির্যাতিতার পরিবার অন্যদিকে ইতিমধ্যেই ৫ মাসের অন্তস্বত্তা হয়ে পড়ে ওই নাবালিকা। বাড়িতে মানসিক ও শারীরিকভাবে ভেঙে পড়ে, গুরুতর অসুস্থ হয়ে যায়। এরপরেই বাধ্য হয়ে একরকম বেপরোয়া হয়ে গোপনে ছুটে যান থানায় নির্যাতিতার মা। সেখানে গত রবিবার সন্ধ্যায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরেই নড়েচড়ে বসে পুলিশ। যদিও অভিযুক্ত যুবক ততক্ষণে গ্রাম থেকে উধাও হয়ে গেছে। তবে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। অন্যদিকে এই ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে এলাকায়। সরব হয়েছে বিভিন্ন মহল। সরব রাজনৈতিক মহলও। বিজেপি সরাসরি অভিযোগ তুলেছে এমন ঘটনার জন্যে তৃণমূলের দিকে। যদিও তৃণমূল সব অভিযোগই অস্বীকার করেছে। নাবালিকা মেয়ে জানায়, অভিযুক্ত ছেলেটির দিদি তাকে ডেকে নিজের বাড়িতে নিয়ে যায়। তাকে বাড়িতে বসতে বলে সে দিদার বাড়ি চলে যায়। ইতিমধ্যে তরুনীকে একা পেয়ে ওই মেয়েটির ভাই ছুরি ভয় দেখিয়ে তাকে জোরপূর্বক ভাবে ধর্ষণ করে। সে যেন কাউকে না বলে তাকে প্রাণ নাশের ভয় দেখায়।

কিশোরীর বাবা বলেন, আমরা গরিব মানুষ। হুমকি দেওয়ায় ভয়ে পুলিশকে কিছু জানাইনি। পরে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে পুলিশের দ্বারস্থ হই। আমাদের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে এলাকার কিছু ধনী মানুষ তাঁর সঙ্গে শাসক দলের কিছু নেতা আমাদেরকে প্রায়ই হুমকি দিচ্ছে। আমি ভ্যান চালিয়ে খাই। আমার মেয়ের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে যারা এভাবে সর্বনাশ করলো তাদের আমি শাস্তি চাই। বাড়ির দাওয়ায় বসে কাঁদতে কাঁদতে আমার মেয়ের সঙ্গে যে অন্যায় হয়েছে তার জন্য আমি সঠিক বিচার চাই। আমার মেয়ের অসহায়তার সুযোগ নিয়ে তার এই সর্বনাশ করলো।  এলাকার কিছু মাতব্বর আমাদেরকে হুমকি দিচ্ছে। আমরা গরিব বলে আমাদের পাশে কেউ নেই। আমরা প্রশাসনের কাছে দাবী রাখছি যাতে আমার মেয়ে যারা এই সর্বনাশ করলো তাদের জন্য উপযুক্ত সাজা হয়। এদিকে অভিযুক্ত যুবকের মা বলেন, ছেলে বাড়িতে নেই। ঘটনায় জড়িত কিনা জানি না। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, প্রমাণ হয় যে ছেলে দায়ী, তা হলে কিশোরীর দায়িত্ব আমরা গ্রহণ করব।

জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক জম্বু রহমান বলেন, ওই বুথে সকলেই বিজেপি। তৃণমূলের নাম করে বাঁচতে চাইছে, জঘন্য অপরাধ কে তৃণমূল কখনও প্রশ্রয় দেয় না এবং দেবেও না। তৃণমূলের বদনাম করতে এসব ষড়যন্ত্র। এমন ঘটনাকে দল সমর্থন করে না। পুলিশ প্রশাসনের কাছে যাবো আমরা অনুরোধ করবো যারা ঘটনার সাথে যুক্ত আছে পুলিশ যেন তাদের বিরুদ্ধে কড়া পদক্ষেপ নেয়। এ প্রসঙ্গে বিজেপির জেলা সাধারণ সম্পাদক কিষান কেডিয়া জানান এলাকায় মেয়েদের কোন সুরক্ষা নেই। শাসকদল এখন ধর্ষণ নিয়ে রাজনীতি করছে। গ্রাম-পঞ্চায়েত, জেলা পরিষদ থেকে সবাই তৃণমূলের। বিজেপি বাধা দিবে সেই সাহস নেই। নজর এড়াতে বিজেপিকে অযথা টানা হচ্ছে। হরিশ্চন্দ্রপুরের আইসি সঞ্জয় কুমার দাস বলেন, অভিযুক্ত এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। তার খোঁজে তল্লাশি চলছে। পুলিশ সমস্ত ঘটনাই খতিয়ে দেখছে।

সম্পর্কিত খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

22,878FansLike
3,912FollowersFollow
14,700SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

সাম্প্রতিক খবর

error: Content is protected !!