উত্তরবঙ্গ নিউজ : মালদা : ৩০ শে সেপ্টেম্বর ২০২১ : বৃহস্পতিবার : (সংবাদ দাতা : বিশ্বজিৎ মন্ডল ) : ঘরে তোলার একমাস আগেই নষ্ট সোনার ফসল আমন ধান।মাথায় হাত চাষিদের। ফসল ঘরের তোলার আগেই তা নষ্ট জমিতে।মালদার চাঁচল-১ নং ব্লকের মৌজার দ্বি-ফসলী মাঠগুলিতে নষ্ট হচ্ছে বিঘার পর বিঘা ধান। দিশেহারা প্রান্তিক চাষিরা। এলাকার সিংহভাগ কৃষক ঋণ নিয়েই চাষ করে ফসল না পাওয়ায় কার্যত হতাশার স্পষ্ট ছাপ দেখা গেছে। কৃষি দপ্তরের ভ্রুক্ষেপ নেই বলে অভিযোগ তুলছেন ক্ষতিগ্রস্ত চাষীরা।
কৃষি দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উত্তর মালদার চাঁচল মহকুমার মৌজাগুলিতে বিপুল পরিমাণে ধানের চাষ হয়। মূলত বিবী এগারো, সন্ন মাসুরী, হাজার দশ প্রজাতির ধান চাষ হয়েছে এবার। এবারও চাঁচল-১ ব্লকের মৌজা গুলিতে প্রায় দশ হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ হয়েছে। মরসুম অনুযায়ী আমন ধান চাষে আগ্রহী হয়েছিল এলাকার চাষীরা। তবে ঘরে ফসল তোলার আগেই জমিতে বিঘার পর বিঘা ধানগাছ নষ্ট হয়ে আগাছায় পরিণত হতে চলছে। যার কারনে এলাকায় তীব্র খাদ্য সঙ্কট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধানের শিষ বের হওয়ার আগেই চাঁচলের মূলাইবাড়ি মৌজার কৃষকরা তা কেটে নিয়ে যাচ্ছে বাড়িতে। কৃষকদের মুখে শোনা গেল তা গবাদি পশুর খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হবে। চাষীরা জমির আলেই মাথায় হাত দিয়ে চিন্তাগ্রস্তের ছবি দেখা বুধবার। আশা ছিল ফলন হলেই সংসারে একটু বাড়তি আয় এবং সারা বছরের আহার জোগান হবে। কিন্তু এই অজানা রোগের হানায় বিঘার পর বিঘার জমির ফসল নষ্ট হতে চলেছে। মুলাইবাড়ির এক কৃষক আখতার হোসেন বিমর্ষ হয়ে জানালেন, পনেরো বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছিলাম। লক্ষাধিক টাকা ঋণ নিয়ে জমিতে চাষ করেছিলাম। কিন্তু ধানের শিষ আর ফুটলো না। জমিতেই নষ্ট সব। আগাছা শুকিয়ে ও পাতা লালচে হয়ে জমিতে নেঙিয়ে পড়েছে চারা। কোন রোগে আক্রান্ত তা বুঝে উঠতে পারছেন তারা। সরকার ক্ষতিপূরণে উদ্যোগী না হলে পথে বসতে হবে চাষীদের। অবিলম্বে ক্ষতিপূরণে দাবি তুলছেন ধান চাষীরা। আরেক চাষী আসাদ আলী জানান, প্রায় তিন বছর ধরে এই অজানা রোগের হানা পড়ে কৃষিজমিতে। এবারও আমার প্রায় আট বিঘে নষ্ট হল। ঋণ নিয়ে চাষ করেছিলাম। সামনেই মেয়ের বিয়ে। কি ভাবে মেয়ের বিয়ের খরচ বহন করব তা ভেবে কূল পাচ্ছিনা। কৃষি দপ্তর আমাদের নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ তুলছে চাষীরা।
আমন ধান নষ্ট হওয়ার কারন নিয়ে চাঁচল-১ নং ব্লকের কৃষি অধিকর্তা দীপঙ্কর দেবকে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি জানান, ব্যাক্টেরিয়া লিফ ব্লাইট, ধসা, মাজরা পোকা রোগ হতে পারে বলে আশঙ্কা। এছাড়াও একই বীজ বারবার প্রয়োগের ফলেই এই রোগের কারন থাকতে পারে। ইতি মধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত দ্বি-ফসলী মাঠগুলিতে পরিদর্শন করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন কৃষি দপ্তর। চাঁচল-১ ব্লকের প্রতিটি মৌজার প্রায় ২৩ হাজার কৃষক শস্যবীমার আওতায় রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের গোচরে তুলে ধরা হয়েছে। তবে চাঁচল মহকুমার সিংহভাগ মানুষের মূল জীবিকা কৃষিকার্য। আর এবার ধান চাষের বিপুল পরিমানে ক্ষতি এলাকায়। ক্ষতিপূরণ না মিললে আদৌ কি পরবর্তী মরসুমে ধান চাষে আগ্রহী হবে চাষীরা, সেই নিয়ে উঠছে প্রশ্ন।