আলিপুরদুয়ার : ৮ই মার্চ ২০২০, রবিবার : যারা প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে সমাজের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে নতুন কিছু করে, তারাই সমাজকে নতুন পথ দেখায়। আর সেই পথপ্রদর্শক যদি হয় নারী তা পায় আলদা মাত্রা। আলাদা করে নারী দিবস নয় । প্রতিটি নারী হয়ে উঠুক নারীশক্তির অনন্য উদাহরণ । এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে বাল্যকাল থেকে সংগ্ৰাম চালিয়ে যাচ্ছে কালচিনি চা বাগানের বাসিন্দা বঙ্গরত্ন ভবানি মুণ্ডা। চা বাগানের অনেক প্রতিভা লুকিয়ে আছে শুধু সূযোগের অভাবে সেই সমস্ত প্রতিভা বিকশিত হতে পারছে ন। চা বাগানের মেয়েরা যাতে তাদের লুকোনো প্রতিভাগুলো সবার সামনে তুলে ধরতে পারে তার জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভবানি। বর্তমানে আলিপুরদুয়ারের কালচিনি থানার সামনে ছোটো একটি চা দোকান চালিয়ে তার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে চা বাগানের মেয়েদের জন্য। ভবানি মুণ্ডা কালচিনি ব্লকের বাসিন্দা। ছোটো থেকে দাদাকে দেখে তার মধ্যে ফুটবল খেলার শখ জন্ম নেয়, কিন্ত আদিবাসী সমাজের মেয়েরা হাফ প্যাণ্ট পড়ে মাঠে নামবে লোকে নিন্দা করবে, বিয়ের জন্য পাত্র পাওয়া যাবে না।
এই জন্য ঘরে থেকে প্রবল বাধা আসে তার ফুটবল খেলায়। এই বাধা সত্তেও ভবানি খেলা শুরু করে এবং কালচিনি ব্লকের বিভিন্ন চা বাগান ঘুরে তৈরি করে মেয়েদের ফুটবল টিম। তার তৈরি ফুটবল টিম ডুয়ার্স একাদশ নিয়ে তারা যাত্রা শুরু। প্রশিক্ষণের অভাব ফুটবল খেলার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের অভাব তাও তারা নিজেদের প্রচেষ্টায় চালিয়ে যায় ফুটবল খেলা । রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় খেলে তার খ্যাতি অর্জন করে। শুধু পশ্চিমবঙ্গ না । অন্যান্য রাজ্যে খেলেও খ্যাতি অর্জন করে। তার এই কৃতিত্ব খুশি হয়ে ২০১৪ সালে অভিনেতা অক্ষয় কুমার তাকে মুম্বাইতে ডেকে বিশেষ সম্মানে সম্মানিত করে। এর পরবর্তীতে ২০১৬ সালে রাজ্যসরকার তাকে বঙ্গরত্ন সম্মান প্রদান করে। বঙ্গরত্ন বাবদ যে এক লক্ষ টাকা নগদ পুরষ্কার পেয়েছিল সেটাও চা বাগানের মেয়েদের খেলার জন্য সে খরচ করে দেয় । নিজের জন্য ভবানি কিছু রাখেনি এবং নিজের জন্য কোনোদিন কিছু চায়নি সে । এরপর বিভিন্ন দপ্তর থেকে বিভিন্ন সময়ে তাকে সম্মানিত করা হয় । ভবানি জানান চা বাগানে বহু প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে কিন্ত অর্থ ও উপযুক্ত পরিকাঠামোর অভাবে প্রতিভাগুলো উঠে আসছেনা। তাই সে চায় চা বাগানের মেয়েদের খেলার জন্য ব্যবস্থা গ্ৰহণ করুক সরকার ।
প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ব্যবস্থা করা হোক । বর্তমানে ভবানি কালচিনি থানার সামনে ছোটো চা দোকান চালিয়ে জীবন জীবিকা নির্বাহ করছে। সকাল ও বিকেল ছোটো ছোটো ছেলেমেয়েদের নিয়ে ফুটবল প্রশিক্ষণ আর সারাদিন চা দোকান এই বর্তমানে জীবন ভবানি মুণ্ডার । ভবানি মুণ্ডার স্বামী দশরথ একজন গাড়ির চালক, সে জানান স্ত্রীর কাজে সে সবসময় উৎসাহ যোগায় যতটুকু পারে সাহায্য করে কিন্ত তার সামর্থ আর কতটুকু। সে তো সামান্য গাড়ির চালক। চা বাগানের মেয়েদের নিয়ে ভবানির টিম রয়েছে ডুয়ার্স একাদশ সেই টিম বিভিন্ন জায়গায় খেলতে যায় যাতায়াতের ভাড়াও ভবানিকে জোগাড় করতে হয় চা দোকান থেকে । এছাড়া মেয়েদের জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম ও খাবারের ব্যবস্থা করতে হয় ভবানি মুণ্ডারই। রবিবার আন্তজার্তিক নারী দিবস। সাজপোশাক বা বাহ্যিক সৌন্দর্যতা নয় অন্তরের সৌন্দর্যতা ও কর্মের মধ্যে দিয়ে আত্মপরিচয় প্রতিষ্ঠা হোক জগতের সমস্ত সৃষ্টির জঠর নারী জাতির।