উত্তরবঙ্গ : ১২ই জুলাই ২০২০ রবিবার : ভারী বর্ষণে ভাসল উত্তরের বিস্তীর্ণ এলাকা। কোথাও হাটু সমান। আবার অনেক এলাকায় কোমর সমান জল দাড়িয়ে যাওয়ায় রবিবার সকাল থেকে বাসিন্দাদের ভোগান্তি চরমে ওঠে। অন্তত ৫০ হাজার মানুষ জলবন্দি হয়েছেন বলে সরকারি-বেসরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে। শহরে নেমেছে নৌকা। ছোটবড় প্রতিটি নদী ফুসছে। করলার জলে প্লাবিত হয়েছে জলপাইগুড়ি শহর। মহানন্দার জল ঢুকেছে শিলিগুড়ি শহরের বিভিন্ন এলাকায়। তিস্তার জলে প্লাবিত মালবাজার ও ময়নাগুড়ি বেশ কিছু এলাকা। তিস্তা ও মানসাই নদীর জলস্তর বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইতে থাকে। দেওয়া হয় লাল সঙ্কেত। জলঢাকা, রায়ডাক ও তোর্সা নদীতে হলুদ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাত থেকেই উত্তরবঙ্গের পাচ জেলা দার্জিলিং, কালিম্পং, জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার ও কোচবিহার ছিল বৃষ্টি। শুক্রবার রাত থেকে শুরু হয় অতিভারী বৃষ্টি। পাহাড়-সমতলে একযোগে বৃষ্টিপাতের জেরে ফুসতে শুরু করে প্রতিটি নদী, নালা ও ঝোরা। সকালে জলপাইগুড়ি জেলার ময়নাগুড়ির ধর্মপুর গ্রাম পপঞ্চায়েতের পশ্চিম বারঘড়িয়া এলাকায় তিস্তা গাইডবাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত করে। প্রায় ১৫০ টি বাড়ি জলবন্দি হয়েছে। জলের তোড়ে ভেঙ্গেছে রাস্তা। তিস্তার ১০৫ নম্বর স্পার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। অন্যদিকে তিস্তার জলে প্লাবিত হয়েছে ময়নাগুড়ির দক্ষিণ পদমতির মতিয়ার চর, ধলুর চর এলাকা।
সেচ দফতরের ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে নিয়ে প্লাবিত এলাকা ঘুরে দেখেন জলপাইগুড়ি জেলা পরিষদের সভাধিপতি উত্তরা বর্মন। শুধু তিস্তা নয়। জলের স্রোতে শিলিগুড়ি মহকুমার বাগডোগড়ার কাছে তারবান্ধায় একটি নদীর কালভার্ট ভেঙেছে। বৈরাগিনী ও তারবান্ধা দুটি গ্রামের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে। জলবন্দি হয়েছে শিলিগুড়ি শহরের একাধিক ওয়ার্ড। ডুয়ার্সের কুচি ডায়নার প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ধসে গিয়েছে নাগরাকাটা ব্লকের লুকসানে কুজি ডায়না শতাব্দী প্রাচীন লালপুল। ১০৪ বছরের পুরনো সেতুটির স্তম্ভ মাঝখানে বসে যায়। এরফলে লুকসানের সঙ্গে চ্যাংমারি, ধরনীপুর, ঝামেলাবস্তি, কেরন চা বাগান এলাকা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
তিস্তার জলে প্লাবিত হয়েছে চাপাডাঙা চাপাডাঙা গ্রাম পঞ্চায়েতের কেরানীপাড়া, মাষ্টারপাড়া, বাবুপাড়া, পশ্চিম সাঙোপাড়া এলাকা। মৌয়ামারী চর এলাকা বিচ্ছিন্ন হয়েছে। মাল নদীর জলের তোড়ে ঝিলকাধুরার কাছে বাঁধ ভেঙেছে প্রায় ১০০ ফুট। প্রায় দু’হাজার মানুষ বিপন্ন হয়েছে। অন্যদিকে মেটেলি ব্লকের চালসার মাটিয়ালি বাতাবাড়ি ১ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের মঙ্গলবাড়ি বস্তিতে মূর্তি নদীর জল ঢুকেছে। এলাকা ঘুরে দেখেন নাগরাকাটার বিধায়ক।
আলিপুরদুয়ার শহরে প্রায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। নদীর জল বেশি থাকায় শহরে জমা বৃষ্টির জল বের করার সুইজ গেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে শহরে বৃষ্টির জল ফুলে ফেপে উঠছে। হঠাৎ কলোনি, সঞ্জয় কলোনি, মিলনপল্লি, বিধান পল্লির চর এলাকা ভেসেছে। পাম্পসেট দিয়ে শহরের জল বের করার চেষ্টা হয়েছে। জেলার ডিমা, কালজানি, তোর্সা, রায়ডাক সহ বিভিন্ন নদীর জল বাড়ছে। আলিপুরদুয়ারের মহকুমা শাসক শ্রী রাজেশ বলেন, আমরা তৈরি আছি। প্রয়োজন হলে আমরা উদ্ধার কাজে নামাবো।
উত্তরবঙ্গের বৃষ্টি এক নজরে :- জলপাইগুড়ি – ১৪৫.৪০/১৯৫৭.৭০ ; আলিপুরদুয়ার – ৩৪৫.৪০/৩৪০১.৪০; কোচবিহার – ১৬২.৪০/১৮৫৩.৯০; শিলিগুড়ি – ২৩২.০০/২০০০.৬০; মালবাজার – ২৯০.৬০/২৪৯৪.০০; হাসিমারা – ১৬১.৪০/২৬৫৩.২০; বানারহাট – ২১০.০০/২১৯৪.৮৭; মাথাভাঙ্গা – ১০১.৪০/১৬৮৮.২০; তুফানগঞ্জ – ১১৫.২০/৩১১৬.৮০; ময়নাগুড়ি – ১১০.০০/১৯৪৬;