জলপাইগুড়ি : মালবাজার : ৪ঠা সেপ্টেম্বর ২০২০ শুক্রবার : সেবকে করোনেশন সেতুর ওপর দিয়ে ১০ টনের বেশি ওজনের যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে ডুয়ার্সের ব্যবসায়ী মহলে। সম্প্রতি জাতীয় সড়ক ৯ নম্বর বিভাগের পক্ষ থেকে এই মর্মে এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হতেই করোনেশন সেতুর দু-পারে সেবক ও মংপং পুলিশ আউটপোষ্টে ভারী যানবাহনের ওপর নজরদারি আরও কঠোর করা হয়েছে। কোনো ভাবেই ১০ টন ওজনের বেশি যানবাহনকে করোনেশন সেতুর ওপর দিয়ে চলাচল করার অনুমতি দিচ্ছে না পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে বিপাকে পড়েছে ডুয়ার্সের অর্থনীতির প্রানভোমরা চা বলয়ের তৈরি চা পরিবহনের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ট্রান্সপোর্ট কোম্পানিগুলোর পাশাপাশি সাধারন পরিবহন মালিকরাও। সরকারি এই সিদ্ধান্তের ফলে চা শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা চা পরিবহনের কাজে জড়িত ট্রাক মালিকদের।
স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে হঠাৎ করে জাতীয় সড়ক ৯ নম্বর বিভাগের পক্ষ থেকে এমন এক বিধি নিষেধ কেন লাগু করা হলো? এর জবাব খুঁজতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একাধিক কর্তার সঙ্গে (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সকলেই) আলোচনার পর জানা গিয়েছে যে রাজ্য সরকারের বিশেষ করে মুখ্যমন্ত্রীর রোষা নলে পড়ার আগেই আগাম সাবধানতা অবলম্বন করতে গিয়ে করোনেশন সেতু নিয়ে অতিমাত্রায় সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। বিষয়টিতে অনুঘটকের কাজ করেছে বাগ্রাকোটের জুরন্তি সেতু।
জুলাই মাসের শেষে বাগ্রাকোটের অদূরে এমইএস মোড়ের কাছে দ্বিতীয়বার জুরন্তি সেতুর অ্যাপ্রোচ ধসে গিয়ে দূর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যুর পর যে ভাবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় পূর্ত ও সড়ক বিভাগের সচিব থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের কাছে নিজের ক্ষোভপ্রকাশ করে রাজ্যের সব সেতুগুলোর স্বাস্থ্য সংক্রান্ত রিপোর্ট তলব করেছিলেন তাতেই আর ঝুঁকি না নিয়ে করোনেশন সেতুর ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। সম্প্রতি করোনেশন সেতুর পশ্চিম পাড়ের পিলারের ভিত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সংস্কারের কাজ শুরু করেছে জাতীয় সড়ক ৯ নম্বর বিভাগ।
এদিকে আবার দূর্বল করোনেশন সেতুর বিকল্প হিসেবে সেবকে তিস্তার ওপর দ্বিতীয় সড়ক সেতুর দাবি ক্রমশঃ মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে। সবমিলিয়ে “প্লে সেফ” কৌশল অবলম্বন করেই করোনেশন সেতু দিয়ে ১০ টন ওজনের বেশি যানবাহন চলাচলে বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
এদিকে জনসমক্ষে এখনও অব্দি এই বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয় নি। অথচ ডুয়ার্সের চা বাগানগুলো থেকে তৈরি চা পাতার প্যাকেট সহ ১৫-১৬ টন ওজনের লরিগুলোকে তো বটেই বালু ,বজরি সহ অন্য ভারী পরিবহনগুলোকেও ঘুরপথে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি জানতে ডুয়ার্সের বিভিন্ন স্থানের পরিবহন মালিকদের সংগঠনের পক্ষ থেকে মংপং পুলিশ আউটপোষ্টে গিয়ে বিক্ষোভ দেখানো হয়। পরিবহন মালিকদের পক্ষে নাগরাকাটার নরেশ আগরওয়াল, বানারহাটের বজরঙ আগরওয়াল, মহঃ রাজু, মহঃ সাহাবুদ্দিন, বীরপাড়ার মনোজ গর্গ, মালবাজারের গোবিন্দ শর্মা, নিমেষ আগরওয়াল প্রমুখ বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে করোনেশন সেতু দিয়ে চা পাতা বোঝাই গাড়িগুলো যেতে দেওয়া হচ্ছে না। কারন জানার জন্য বিধি নিষেধের বিজ্ঞপ্তির কপি দেখতে চাইলেও তা দেখাতে অস্বীকার করেন মংপং পুলিশ আউটপোষ্টের আধিকারিক সমীর লেপচা। অনেকটাই ঘুরে দীর্ঘ সময় পেরিয়ে তবে শিলিগুড়ি পৌঁছানো যাচ্ছে। এভাবে পরিবহন খরচ বেড়ে যাচ্ছে অনেকটাই। এভাবে ডুয়ার্সের অর্থনীতির জিয়নকাঠি চা বলয়ের তৈরি চা এর মুভমেন্ট বন্ধ করে দেওয়ার অপচেষ্টা হলে পুরো চা শিল্পের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। নরেশ আগরওয়াল বলেন, বিকল্প ব্যবস্থার দাবিতে বিষয়টি নিয়ে সরব হতে ডুয়ার্সের চা শিল্পের সঙ্গে জড়িত প্রতিটি মালিক ও শ্রমিক সংগঠন সহ ওদলাবাড়ি থেকে বীরপাড়া পর্যন্ত পরিবহন মালিকদের একাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে রাজ্য সরকারের সর্বোচ্চ স্তরে আবেদন জানানো হবে। এব্যাপারে মংপং পুলিশ আধিকারিকদের সাথে কথাও বলেছেন তারা।
অন্যদিক, পুরো বিষয়টিতে মুখে কুলুপ এঁটেছেন জাতীয় সড়ক ৯ নম্বর বিভাগীয় কতৃপক্ষ। প্রকাশ্যে তারা কোনও মন্তব্য করতে চাইছেন না।